সেশনজটে নাকাল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, [২]দায়সারাভাবে চলছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট বেড়েই চলেছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ছিল না সেগুলোতেও এখন প্রায় এক বছরের সেশনজট শুরু হয়েছে। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও এ কারণে বিপাকে পড়েছেন।

[৪]করোনা শুরু হওয়ার পর বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও সিংহভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ক্লাস বন্ধ রয়েছে। এদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে দায়সারাভাবে। কোর্স শেষ করতে নামেমাত্র অনলাইন ক্লাস চালু রেখেছে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ বিভাগে অনলাইনে ক্লাস চলমান আছে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাসিমুল হুদা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার সময় পঞ্চম সেমিস্টারে ছিলাম আমরা। অনলাইনে ক্লাস শেষ করে ফাইনাল পরীক্ষা না নিয়ে ষষ্ঠ সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়েছে। করোনার কারণে পরীক্ষা না হওয়ায় এরই মধ্যে বিভাগগুলো সেশনজটে পড়তে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর প্রথমদিকে পুরোদমে অনলাইন ক্লাস চললেও এখন চলছে দায়সারাভাবে। কোনো বিভাগ নিচ্ছে, কোনো বিভাগ নিচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণও কমে গেছে ক্লাসগুলোতে। ক্লাসের লেকচার ভিডিও শিক্ষার্থীদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। এভাবেই দায়সারাভাবে চলছে চবির অনলাইন ক্লাস। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দীর্ঘমেয়াদি সেশনজটের শঙ্কা রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ বিভাগে। এরমধ্যে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ইংরেজি ও নাট্যকলা বিভাগ, জীববিজ্ঞান অনুষদের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ এবং স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ অন্যতম।
[১] অভিবাসী শিশুদের আটককেন্দ্রে রাখার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে গোপনে সমর্থন জানান মেলানিয়া, ইভানকাকে ‘সাপ’ বলে মন্তব্য ≣ [১] পর্যটকশূন্য সৈকতে ফিরেছে প্রাকৃতিক পরিবেশ : চলছে ডলফিন ও লাল কাঁকড়ার মিলন মেলা ≣ নিজ খরচে অসহায় ২ হিন্দু মেয়ের বিয়ে দিলেন মুসলিম প্রতিবেশী!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, করোনা প্রকোপের শুরুর দিকে কিছু বিভাগে অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও ক্রমে তা কমেছে। বর্তমানে অধিকাংশ বিভাগে এ ক্লাস হচ্ছে না। এ ছাড়া বর্তমানে উপাচার্যের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বন্ধ ক্যাম্পাসেও বিরাজ করছে উত্তেজনা। শিক্ষকরাও পক্ষে-বিপক্ষে দুই ভাগে ভাগ হয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে একাডেমিক কার্যক্রমে। এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, প্রথমদিকে বেশিরভাগ বিভাগে অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও তা গতি পায়নি। যেগুলোতে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে সেগুলোতেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। কিছু বিভাগ অনলাইনে কোর্স শেষ করলেও পরীক্ষা না হওয়ায় সেশনজট বাড়ছে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগে দুই থেকে আড়াই বছরের সেশনজট বিরাজ করছে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলা, ইংরেজি, ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞানসহ প্রায় সবকটি বিভাগেই সেশনজট বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষ প্রথম পর্বের শিক্ষার্থী রাব্বী হাসান সবুজ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ইউজিসির নির্দেশনা থাকলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ বিভাগে বর্তমানে দুই বছরের সেশনজট চলছে।

এদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে দায়সারাভাবে। কোর্স শেষ করতে নামমাত্র অনলাইন ক্লাস চালু রেখেছে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেশনজট বন্ধ করতে ও নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইউজিসির কাছে অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি চাইলে সম্প্রতি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাতটি নির্দেশনাসহ অনার্স-মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষা, ব্যবহারিক ক্লাস ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নির্দেশনায় বলা হয়, শুধু অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের সর্বশেষ সেমিস্টারের ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া যাবে। দিনে কোনো প্রোগ্রামের একটির বেশি ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্যবিধি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। আরও বলা হয়, প্রতি ক্লাসে একসঙ্গে ১০ শিক্ষার্থীর অংশ গ্রহণে ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে ক্যাম্পাসে আগমন এবং শেষ হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে প্রস্থান নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষার হলে প্রতি শিক্ষার্থীর মাঝে ন্যূনতম ছয় ফুট দূরত্ব থাকতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর লাখ লাখ শিক্ষার্থী। বিশেষ করে স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ২ লাখ ২৬ হাজার শিক্ষার্থী বড় সমস্যায় রয়েছেন। গত বছরের শেষ দিকে তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হলেও পাঁচটি পরীক্ষা দেওয়ার পরেই করোনার প্রকোপে বন্ধ হয়ে যায় বাকি পরীক্ষা। এরপর দীর্ঘ সাত মাস হলেও বাকি পরীক্ষাগুলো শেষ হয়নি এ ছাত্রছাত্রীদের।

জানা গেছে, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফাজিল অনার্স প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থবর্ষ পরীক্ষা ২০১৯ শেষ হয়েছে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরীক্ষার পর দীর্ঘ ১০ মাস অতিবাহিত হলেও ফলাফল পাননি এ শিক্ষার্থীরা। এতে করে চাকরিতে আবেদন করতে না পারা ছাড়াও সেশনজটের মধ্যে পড়ে গেছেন ছাত্রছাত্রীরা।

করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সেশনজটের দুর্ভোগ জেঁকে বসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর ওপর। এসব কলেজেও ক্লাস চলছে দায়সারাভাবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *