সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এশিয়ায় নেতৃত্ব দিতে চায় এইচএসবিসি

ইউরোপে নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে ব্রিটিশ বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি। এর মাধ্যমে সংস্থাটি লোকসান ও কম মুনাফার বাজার থেকে বেরিয়ে আসছে। পরিবর্তে অধিক মুনাফার বাজার এশিয়ার দিকে ঝুঁকছে ইউরোপের বৃহত্তম এ ব্যাংক। ইউরোপ থেকে চীন-হংকংয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে সিনিয়র নির্বাহীদের। ব্যবসা স্থানান্তরের এ পরিকল্পনায় পাঁচ বছরে এশিয়ায় এক নম্বর সম্পদ ব্যবস্থাপক হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে ব্যাংকটি। খবর ব্লুমবার্গ ও রয়টার্স।

এরই মধ্যে এইচএসবিসি ফ্রান্সের রিটেইল ব্যবসা বিক্রির চুক্তিতে পৌঁছেছে। মাই মানি গ্রুপ এ ব্যবসা অধিগ্রহণ করছে। চুক্তি অনুযায়ী, মাই মানি এইচএসবিসির ২৪৪টি শাখা অধিগ্রহণ করবে। এর মধ্যে পড়বে ৩ হাজার ৯০০ কর্মী এবং ২ হাজার ৪০০ কোটি ইউরোর সম্পদ। রিটেইল ইউনিট বিক্রি করলেও ফ্রান্সে বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক ব্যাংকিং ইউনিটগুলো এইচএসবিসি নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই রাখবে। যদিও চুক্তিটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এইচএসবিসি ও মাই মানি যদি এ চুক্তি এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে চলতি বছরের তৃতীয় বা চতুর্থ প্রান্তিকে এটি স্বাক্ষর হতে পারে। এরপর ২০২৩ সাল নাগাদ চুক্তিটি সম্পূর্ণ হবে।

এইচএসবিসি পিনাকল ভেঞ্চারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ত্রিস্তা সান জানান, এইচএসবিসি হোল্ডিংস পিএলসি ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধ অঞ্চলে গ্রাহকদের সম্পদ পরিচালনা করতে চায়। এক্ষেত্রে প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে এশিয়ায় এক নাম্বার সম্পদ ব্যবস্থাপক হওয়ার লক্ষ্য নেয়া হয়েছে।

ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে সান বলেন, চীনে গৃহস্থালি সম্পদ খুব দ্রুত বাড়ছে এবং বিশ্বব্যাপী তা দ্বিতীয় বৃহত্তম হয়ে উঠেছে। সেখানে প্রায় ৩৪ কোটি মধ্যবিত্ত জনসংখ্যা রয়েছে। এ সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ৫০ কোটিতে পৌঁছে যাবে বলে আশা করছি।

লন্ডনভিত্তিক ব্যাংকটি এশিয়ায় তার ভবিষ্যৎ তৈরি করছে। বিশেষত চীনে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রসারে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়েছে সংস্থাটি। এ অঞ্চলে সংস্থাটি কোটি কোটি ডলার স্থানান্তর করছে। পাশাপাশি আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য সংস্থাটি পাঁচ হাজারেরও বেশি নতুন সম্পদ পরিকল্পনাকারী নিয়োগের পরিকল্পনা করছে।

এইচএসবিসির মতে, অর্থনৈতিক গতি ত্বরান্বিত করে চীন আগামী পাঁচ বছরে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি এবং মধ্যবিত্তের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক বাড়িয়ে তুলবে।

যদিও এশিয়ার বাজারে এক নাম্বার হয়ে উঠতে এইচএসবিসিকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে। কারণ ক্রমবর্ধমান এ বাজারে ক্রেডিট সুইস গ্রুপ এজি ও গোল্ডম্যান স্যাকসের মতো আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। চায়না মার্চেন্ট ব্যাংকের আধিপত্য করা চীনের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাজার ক্রমে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে। সম্প্রতি ব্যাংকটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়নার সঙ্গে সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি যৌথ উদ্যোগ শুরু করেছে।

এইচএসবিসি পিনাকল ভেঞ্চারের সিইও বলেন, বাজারটি সবার জন্য যথেষ্ট বড়। চীনের বাজারের একমাত্র ধ্রুবক হলো গতি ও পরিবর্তন। দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকের চাহিদাও প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। সুতরাং সফল হতে চাইলে এ প্রবণতার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

ত্রিস্তা সানের মতে, এইচএসবিসি এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ জন সম্পদ পরিকল্পনাকারী নিয়োগ দিয়েছে। এছাড়া ব্যাংকটি একটি হাইব্রিড মডেল গ্রহণ করেছে, যা ডিজিটাল পরিষেবা ও একক ব্যক্তিদের প্রতি মনোযোগ দেয়। হংকং ও দক্ষিণের বেশ কয়েকটি শহর ঘিরে থাকা সাত কোটিরও বেশি মানুষের অর্থনৈতিক কেন্দ্র গ্রেটার বে এরিয়ার মতো নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে সম্ভাবনার অধিক সুযোগ রয়েছে বলে জানান সান।

এছাড়া চীনের গুয়াংজু, হ্যাংজু, সাংহাই ও শেনজেন শহরে এইচএসবিসি ব্যক্তিগত সম্পদ পরিকল্পনা পরিষেবা বিস্তৃত করছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *