শতাব্দীর প্রথম ‘টিনএজ’ ফাইনাল

এবারের ইউএস ওপেন যেন গাইছে তারুণ্যের জয়গান। ২২ বছর পর ইউএস ওপেনে অল ‘টিনএজ’ ফাইনাল দেখছে টেনিস বিশ্ব। নিউ ইয়র্কে ফাইনালে উঠেছেন কানাডার লায়লা ফার্নানদেজ আর বৃটেনের এমা রাডুকানু। সেমিফাইনালে ১৮ বছর বয়সী রাডুৃকানু দাপুটে টেনিসে ৬-১ ও ৬-৪ গেমে হারান গ্রিসের মারিয়া সাকারিকে। বৃটেনের কনিষ্ঠতম টেনিস তারকা হিসেবে গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে উঠেছেন রাডুকানু। ফ্ল্যাশি মিডোতে অন্য সেমিফাইনালে ছিল বড় চমক। আসরের দ্বিতীয় বাছাই খেলোয়াড় বেলারুশের আরিনা সাবালাঙ্কাকে তিন সেটের লড়াই শেষে ৭-৬ (৩), ৪-৬, ৬-৪ গেমে হারান ১৯ বছর বয়সী লায়লা ফার্নানদেজ।
চলতি শতকে এই প্রথম ইউএস ওপেনে মেয়েদের ফাইনালে এত অল্প বয়সী দুই খেলোয়াড় মুখোমুখি হচ্ছেন।

১৯৯৯ সালে শেষবার টিনএজ বয়সে মেয়েদের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই ‘অষ্টাদশী’ তারকা যুক্তরাষ্ট্রের সেরেনা উইলিয়ামস ও সুইজারল্যান্ডের মার্টিনা হিঙ্গিস। সর্বশেষ উইম্বলডনে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন রাডুকানু। তবে ব্যাপারটিকে অনেকেই সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখেননি। বিস্তর সমালোচনাও হয়েছিল। মানসিকভাবে দুর্বল বলে রাডুকানুকে কটাক্ষ করা হয়েছিল। ইউএস ওপেনে তিনি ফাইনালে পৌঁছেছেন এখন পর্যন্ত কোনো সেট না খুইয়ে (বাছাইপর্বের তিন ম্যাচসহ)।
এবারের ফাইনালের এ দুই তারকা ইতিহাস গড়েছেন ইতিমধ্যেই। বিশ্বের ১৫০তম খেলোয়াড় রাডুকানু এবারের বাছাইপর্ব খেলে ফাইনালের কৃতিত্ব দেখালেন। টেনিসের উন্মুক্ত যুগে ইউএস ওপেনের ইতিহাসে কোয়ালিফাই খেলে আসা প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে সেমিফাইনালে পৌছেন তিনি। আর গ্র্যান্ড স্লাম টেনিসে এমন কীর্তি গড়া মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় তিনি। ক্যারিয়ারে এখনও কোনো ডাব্লিউটিএ ট্যুর শিরোপার স্বাদ পাননি এমা রাডুকানু। সেমিফাইনালে জয় শেষে রাডুকানু বলেন, ‘সত্যিএ পর্যন্ত আসবো ভাবিনি। আমি নিজেই অবাক। গ্র্যান্ড স্লাম খেলার স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু ক্যারিয়ারের এ পর্যায়েই গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালে খেলছি, আমার ভাষা নেই।’ গ্র্যান্ড স্লাম টেনিসে গত ১৭ বছরে সবচেয়ে কমবয়সী ফাইনালিস্ট এমা রাডুকানু। এমন ঘটনায় সর্বশেষ ২০০৪’র উইম্বলডনের ফাইনালে খেলেন রাশিয়ার ১৭ বছর বয়সী তারকা মারিয়া শারাপোভা। আর মেয়েদের একক গ্র্যান্ড স্লামে বৃটিশদের অপেক্ষাটা সুদীর্ঘ। মেয়েদের গ্র্যান্ড স্লাম টেনিসে বৃটিশরা শিরোপার দেখা যায়নি দীর্ঘ ৪৪ বছর। সর্বশেষ ১৯৭৭ সালে উইম্বলডনে এমন কৃতিত্ব দেখান বৃটেনের ভার্জিনিয়া ওয়েড। এবারের ইউএস ওপেনে লায়লা ফার্নানদেজকে দেখা গেছে জায়ান্ট কিলারের চেহারায়। ২০১৮ ও ২০২০’র চ্যাম্পিয়ন এবং আসরের তৃতীয় বাছাই নাওমি ওসাকা আর ২০১৬’র শিরোপাজয়ী অ্যাঞ্জেলিক কারবারের এবারের যাত্রা থামান লায়লা ফার্নানদেজ। আসরে পঞ্চম বাছাই এলিনা সভিতোলিনার পর বিদায় করলেন দ্বিতীয় বাছাই খেলোয়াড় সাবালাঙ্কাকে। তার এবারের সাফল্যকে ‘জাদুকরী’ আখ্যা দিচ্ছেন লায়লা। র‌্যাঙ্কিংয়ের ৭৩তম খেলোয়াড় লায়লা বলেন, ‘আমি যেভাবে খেলে যাচ্ছি এক কথায় এটাকে জাদুকরি বলতে পারি আমি। আমি আনন্দ নিয়ে খেলছি। কোর্টে দর্শকদের আনন্দ দিতে চাচ্ছি।’
ইউএস ওপেনের ফাইনালের লাইনআপ দেখে সামাজিকমাধ্যমে চলছে এশিয়ান অভিবাসীদের উচ্ছ্বাসের জোয়ার। এমা রাডুকানু রোমানিয়ান পিতা ও চায়নিজ মাতার সন্তান। আর লায়লা ফার্নানদেজ ফিলিপিনো-কানাডিয়ান মা ও ইকুডোরিয়ান পিতার কন্যা। সমিফাইনাল শেষে লায়লাকে যখন বলা হয় তার জন্য ফিলিপাইনের মানুষের টেনিসে আগ্রহ বেড়েছে তখন লায়লা বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত যে ফিলিপিনোরা আমাকে সমর্থন যোগাচ্ছেন। সবাইকে ধন্যবাদ। আমি নানীর হাতের ফিলিপিনো খাবার খাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’ এমা রাডুকানু বলেন, চায়নিজ মায়ের কাছে শৃঙ্খলা ও কঠিন পরিশ্রম করতে শিখেছেন তিনি। দুইবারের গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপাজয়ী চায়নিজ টেনিস তারকা লি না তার অনুপ্রেরণা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *