রাজস্থানে নূপুর শর্মার সমর্থককে হত্যা: ১৪৪ ধারা জারি, আটক ২

ভারতের রাজস্থানের উদয়পুরে বিজেপি’র সাবেক মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থক কানহাইয়ালাল তেলি (৪০) ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার প্রকাশ্য দিবালোকে শিরচ্ছেদের ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। হামলাকারীরা এ সংক্রান্ত ভিডিও প্রকাশ করে দায় স্বীকার করেছে। পারসটুডে

নিহত কানহাইয়ালাল তেলি

নিহত কানহাইয়ালাল তেলি

ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদয়পুরের ৭টি থানা এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ধানমন্ডি, ঘন্টাঘর, হাতিপোল, অম্বামাতা, সুরজপোল, ভূপালপুরা এবং সাবীনা থানা এলাকা। এছাড়াও ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। অভিযুক্ত রিয়াজ আনসারি এবং মহম্মদ গওস দু’জনকেই সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ গ্রেফতার করা হয়েছে।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে সম্প্রতি বিজেপির সাবেক মুখপাত্র নূপুর শর্মার আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে দেশজুড়ে মুসলিমরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। একইসঙ্গে ওই ইস্যুতে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।    

হিন্দি গণমাধ্যম ‘ভাস্কর’ সূত্রে প্রকাশ, নামে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শান্তি বজায় রাখতে ২৪ ঘণ্টার জন্য রাজস্থানের উদয়পুর জেলায় ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে হাতিপোল, ঘন্টাঘর, অশ্বনী বাজার, দেহলী গেট ও মালদাস স্ট্রিটের বাজার বন্ধ রয়েছে। গোটা রাজস্থানে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে ৫০ লাখ টাকা ও একটি সরকারি চাকরি দাবি করেছেন।

কানহাইয়ালাল তেলির (৪০) ধানমন্ডিতে অবস্থিত ভূতমহলের কাছে ‘সুপ্রিম টেইলার্স’ নামে একটি দোকান রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে মোটর বাইকে করে দু’জন হামলাকারী আসে। কাপড়ের মাপ দেওয়ার অজুহাতে তারা দোকানে প্রবেশ করে। এ সময়ে কানাইহা লালের উপরে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। তার ওপর তলোয়ার নিয়ে হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির।    

ওই ঘটনার খবর পেয়ে ধানমন্ডিসহ ঘন্টাঘর ও সুরজপোল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ঘটনাস্থলে রয়েছে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ‘এফএসএল’ টিম। দলটি ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। ঘটনার পর বিরোধীদলীয় নেতা গুলাবচাঁদ কাটারিয়াও এসপিকে ফোন করে ঘটনার খোঁজখবর নেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করতে হবে। 

প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেন, “উদয়পুরের ঘটনা ছোটখাটো ঘটনা নয়। যেভাবে এটা করা হয়েছে তা কল্পনার বাইরে। কেউ কী এমনটা করতে পারে? এর যতই নিন্দা করা হোক তা কম হবে। আমি সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি বিরোধীদলীয় নেতা গুলাবচাঁদ কাটারিয়াজির সঙ্গেও কথা বলেছি। আমরা বলছি, সবাই মিলে এমন সময়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে দেবেন না। দোষীরা রেহাই পাবে না। গোটা পুলিশবাহিনী এজন্য ব্যস্ত রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতার করতে কোনও দ্বিধা থাকবে না। মানুষের রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমিও এটা অনুভব করি। সেটা মাথায় রেখেই আমরা ব্যবস্থা নেব।”

দিন দশেক আগে কানহাইয়ালাল তেলি বিজেপি থেকে সাসপেন্ড হওয়া নূপুর শর্মার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন। এরপর থেকে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। একনাগাড়ে হুমকিতে কানহাইয়ালাল হয়রান  হয়ে পড়েন। ৬ দিন ধরে দোকানও খোলেননি। যারা হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাকে কয়েকদিন সতর্ক থাকতে বললেও অভিযুক্তদের গ্রেফতারে গুরুত্ব দেখায়নি বলে অভিযোগ। এরপর আজই তিনি নিহত হলেন। 

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হচ্ছে, দর্জি যখন ওই যুবকের পোশাকের মাপ নিচ্ছিলেন, সেই সময় ধারাল অস্ত্র বের করে তাঁর গলা কেটে দেয় হামলাকারী। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে মুখ খুলতে হয় খোদ রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকে। তিনি বলেন, ‘আমি এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করছি। উদয়পুরে এক যুবককে খুন করা হয়েছে। সমস্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনার প্রতিবাদে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও। তিনি লেখেন, ‘জয়পুরের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা শুনে আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। ধর্মের নামে বর্বরতা সহ্য করা হবে না। যাঁরা এই আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের একসঙ্গে মিলেমিশে ঘৃণাকে হারাতে হবে। আমার সকলের কাছে আবেদন, দয়া করে শান্তি এবং সৌভ্রাতৃত্ব বজায় রাখুন।’ ঘটনার নিন্দা করেছে বামেরাও।

রাজস্থান পুলিশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) হাওয়া সিং ঘুমারিয়া জানান, উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তাদের নেতৃত্বে সশস্ত্র পুলিশের ৬০০ সদস্যের একটি দলকে উদয়পুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বহাল করা হয়েছে। পরে পুলিশ রাজসমন্দ জেলা থেকে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দাবি, ওই দুই ব্যক্তিই উদয়পুরের দর্জিকে খুন করেছে। পরে তারা পালানোর চেষ্টা করছিল। সেই সময় তাদের ধরে ফেলা হয়েছে। 

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেছিল। সেই ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, নিহত দর্জির কাছে এক যুবক পোশাকের মাপ দেওয়ার নাম করে যায়। অপরজন গোটা ঘটনাটা ভিডিও করছিল। দর্জি যখন ওই যুবকের পোশাকের মাপ নিচ্ছিলেন, সেই সময় ধারাল অস্ত্র বের করে তাঁর গলা কেটে দেয় হামলাকারী। ভিডিওয় আহত ওই দর্জিকে বারবার বলতে শোনা গিয়েছে, ‘কী হয়েছে, আমাকে বল, কেন এমন করলে!’ পুলিশ জানিয়েছে, এতেই ক্ষান্ত হয়নি আততায়ীরা। ওই ভিডিওয় তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও এভাবেই খুনের হুমকিও দিয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *