রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই ১৪১ জন নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগ বাতিল হচ্ছে

অ্যাডহক নিয়োগ বন্ধ রাখার প্রজ্ঞাপন থাকলেও শেষ কর্মদিবসে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়ে যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য আব্দুস সোবহান। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের নিয়োগ না দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লিখিত কঠোর নির্দেশনা ছিল। মন্ত্রণালয় বলছে, এই নিয়োগ অবৈধ। এই অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি বলছে, সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে এই নিয়োগ আদেশের কোনো কার্যকারিতাও নেই। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

গত বৃহস্পতিবার ছিল রাবিতে উপাচার্য আব্দুস সোবহানের শেষ কর্মদিবস। ঐ দিন ৯ জন শিক্ষক, ২৩ জন কর্মকর্তা, ৮৫ জন নিম্নমান সহকারী এবং ২৪ জন সহায়ক কর্মচারীর অ্যাডহক ভিত্তিক নিয়োগ আদেশ জারি করেন তিনি। চাকরি পাওয়াদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তান, স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজন, ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মী ও কয়েক জন সাংবাদিকও রয়েছেন। নিয়োগ আদেশ জারি করেই পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস ছাড়েন উপাচার্য। পরে এই বিতর্কিত নিয়োগ নিয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ঐ দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ নিয়োগের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান ইউজিসি সদস্য এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ আলমগীর গতকাল বলেন, ‘ঐ নিয়োগ আদেশ অটোমেটিক বাতিল হবে। ঐ নিয়োগের কোনো কার্যকারিতা নেই। উপাচার্য একটি নিয়োগ আদেশ দিয়ে গেছেন। এটাই নিয়োগ হয়ে গেল বলা যাবে না। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘তদন্ত কমিটিকে বলা হয়েছে, এই অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ দিতে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
[১] মুনিয়ার ভাই সবুজ লাপাত্তা, কম্প্রোমাইজের অভিযোগ আনলেন বোন তানিয়া ≣ [১] সিরাজগঞ্জে ৪ জন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার ≣ বরগুনার আমতলীতে জমি নিয়ে বিরোধে বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, অনধিক ছয় মাসের জন্য অ্যাডহক নিয়োগ দেওয়া হয়। অ্যাডহক নিয়োগের সময় বাড়ানো যায়। তবে নিয়োগ স্থায়ী করতে হলে পত্রিকায় সার্কুলার দিয়ে প্রার্থীদের পরীক্ষা নিতে হয়। নিয়োগ স্থায়ী করা না হলে ঐ নিয়োগের কোনো কার্যকারিতা থাকে না। তবে ২০০৯ সালে সরকারি এক প্রজ্ঞাপন দ্বারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডহক নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়। প্রজ্ঞাপন আইনেরই অংশ। সে কারণেও উপাচার্য এভাবে নিয়োগ দিতে পারেন না। এটা আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করছেন অনেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, এভাবে নিয়োগ দিয়ে ভিসি বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘন করেছেন। এ কারণে উপাচার্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির অপর এক সদস্য বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী উপাচার্যের অ্যাডহক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা আছে। তবে এর আগে একই আইনে বলা আছে, উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, বিধিসহ দায়িত্ব পালন করতে হবে বিশ্বস্ততার সঙ্গে। কিন্তু এভাবে নিয়োগ দিয়ে তিনি তার দায়িত্ব পালনের বিশ্বস্ততা হারিয়েছেন। এছাড়া নিয়োগের জন্য প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশও নিতে হয়। সেটাও নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, এই অবৈধ নিয়োগ আদেশে স্বাক্ষর নেই রাবি রেজিস্ট্রারের। এর পরের কর্মকর্তা অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারও অবৈধ নিয়োগ আদেশে স্বাক্ষর দিতে রাজি না হওয়ায় উপাচার্যের অনুসারী এক উপ-রেজিস্ট্রার সেখানে স্বাক্ষর করেন। নিয়োগ পাওয়া এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিয়োগ পাওয়ার পর তারা বৃহস্পতিবারই যোগদান করেন। তবে এই নিয়োগ নিয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যেই হতাশা তৈরি হয়েছে। তাদের চাকরি টিকবে, কি টিকবে না—এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে প্রথম মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পান অধ্যাপক সোবহান। নিয়মের বাইরে গিয়ে সে সময় কয়েক শ’ শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগ দেন তিনি। ঐ সময় প্রশাসনিক নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। নানা অনিয়ম থাকার পরও ২০১৭ সালের ৭ মে দ্বিতীয়বারের মতো উপাচার্য পদে নিয়োগ পান তিনি। এরপর আরো নানা প্রশাসনিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। যোগ্যতা শিথিল করে মেয়ে ও জামাতাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, রাষ্ট্রপতিকে অসত্য তথ্য দেওয়াসহ নানা অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এসব অনিয়মের কারণে গত বছরের জানুয়ারিতে ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জমা পড়ে। পরে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অভিযোগসমূহ তদন্তে ইউজিসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কমিটি উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনতে উন্মুক্ত শুনানির আয়োজন করে। তদন্ত কার্যক্রম শেষে গত ২১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ইউজিসি। তদন্তে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যদের বিরুদ্ধে ২৫টি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১০ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রাখাসহ বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে উপাচার্যকে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। –

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *