যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে চীনা অর্থনীতি?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র সপ্তাহখানেক বাকি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম উত্তাপপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে এটি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরেক দফায় হোয়াইট হাউজের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন কিনা, সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে একটা কথা এখনই বলে দেয়া যায়, রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন, যিনিই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসুন না কেন, তা নিয়ে চীন হয়তো খুব বেশি মাথা ঘামাচ্ছে না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিশ্ব রাজনীতিতেই সবচেয়ে বেশি চর্চিত বিষয়। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে যিনি হোয়াইট হাউজে আসবেন, তিনি অন্য দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের প্রতি কতখানি কৃপাদৃষ্টি দেবেন, তা নিয়ে চিন্তায় থাকে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকাররা। কিন্তু চীন এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের আনুকূল্যের ওপর নির্ভরশীল নয়। তাদের অর্থনীতি এখন এতটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে যে কভিড-১৯ মহামারীর কারণে অন্যান্য দেশ যখন এখনো ধুঁকছে, চীন তখন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে। অর্থনীতির এই শক্ত ভিত্তিই দেশটিকে এতটা দুর্ভাবনাহীন থাকার সুযোগ করে দিয়েছে।

আগামী পাঁচ বছর চীনের অর্থনীতি কোন পথে এগোবে, তার কৌশল নির্ধারণের জন্য গতকাল থেকে বৈঠক শুরু করেছে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সেন্ট্রাল কমিটি। এটি হবে দেশটির ১৪তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। বিশ্লেষকদের ধারণা, এ পরিকল্পনার কেন্দ্রে থাকবে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। গণমাধ্যমের জন্য এ বৈঠক উন্মুক্ত নয়। তাই বৃহস্পতিবার বৈঠক শেষ হওয়ার আগে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে জানা যাবে না।

তবে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রশাসন নিশ্চয়ই এমন কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করবে, যাতে উত্তরণের পথে থাকা চীনের অর্থনীতি উত্কর্ষের আরো শিখরে আরোহণ করতে সক্ষম হবে। এরই মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস সৃষ্ট মন্দা কাটিয়ে ওঠার মাধ্যমে চীনের পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়েছে মসৃণ গতিতে। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটির প্রবৃদ্ধির গতিপথও বেশ আশাজাগানিয়া। এ গতিপথ থেকে চ্যুত না হলে আগামী এক দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে—এমন ধারণা করছেন অনেকেই। আর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চাইছেন, তার দেশের অর্থনীতি এমন অবস্থানে উন্নীত হোক, যেন বহির্বিশ্বের কোনো ঘটনাই একে টলাতে না পারে।

এ উন্নতির শিখরে আরোহণের পথে জিনপিংয়ের প্রধান কৌশলই হলো স্বনির্ভরতা। বেইজিংভিত্তিক বেসরকারি ইকুইটি ফার্ম প্রিমাভেরা ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ফ্রেড হু বলেছেন, ‘আত্মনির্ভরতা হলো এমন এক কৌশল, যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে উদ্ভাবন, গবেষণা ও উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ। বাইরের পরিবেশ যখন অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ থাকে, তখন এর চেয়ে দূরদর্শিতাসম্পন্ন কৌশল আর কিছু হতে পারে না।’

অবশ্য আত্মনির্ভরশীল হওয়ার অর্থ এই যে চীন তাদের দীর্ঘদিনের ‘ওপেন ডোর’ নীতি থেকে একেবারে সরে আসবে, তা মনে করেন না আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও গোল্ডম্যান স্যাকস গ্রুপের সাবেক কর্মী ফ্রেড হু। বরং শি জিনপিং ও তার কর্মকর্তারা এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, চীনের অর্থনীতি ভবিষ্যতে বহির্বিশ্বের জন্য আরো বেশি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। বাইরের বিনিয়োগকারীরা সেখানে অর্থ লগ্নি করতে পারবেন। বাজার প্রতিযোগিতার ন্যায্যতাও নিশ্চিত করা হবে। চলতি মাসেই শেনঝেনে এক বক্তব্যে জিনপিং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে এগিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে তিনি একটি বিষয় স্পষ্ট করেন যে একটি নতুন উন্মুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চান।

বৈদেশিক বাণিজ্য চীনা অর্থনীতির জন্য বড় একটি শক্তির জায়গা। প্রতিবেশী ও দূরবর্তী অঞ্চলে নিজেদের ভূরাজনৈতিক প্রতিপত্তি সুসংহত করার ক্ষেত্রেও জিনপিং প্রশাসনের জন্য অন্যতম অস্ত্র এটি। মহামারীর কারণে যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ নিজেদের অর্থনীতি সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে, তখন চীনের আমদানি-রফতানি দুটোই বাড়ছে। এতেই বোঝা যায় দেশটির অর্থনীতি কোন অবস্থানে পৌঁছেছে। এ গতি অব্যাহত থাকলে দেশটির যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দেয়াটা পুরোপুরি যৌক্তিক। ব্লুমবার্গ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *