মিয়ানমারের শহরতলির বস্তিতে খাদ্য সংকট চরমে

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত মহামারীর প্রথম ঢেউ আঘাত হানার পর নিজের দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হন মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দা মা সু। স্বামী নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। মহামারী প্রতিরোধে লকডাউন আরোপ করায় তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে সুর দোকানও বন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই সংসারে অভাব দেখা দেয়। খাবার জোগাড় করতে নিজের অলংকার ও স্বর্ণ বন্ধক রাখেন সু।

করোনার দ্বিতীয় জোয়ার শুরুর পর গত সেপ্টেম্বরে পুনরায় লকডাউন আরোপ করে মিয়ানমার সরকার। ফলে দোকান আবার বন্ধ করতে বাধ্য হন সু। আবার বন্ধ হয় আয়ের পথ। এবার জামা-কাপড়, থালা-বাসন যা আছে, তাই বিক্রি করে দিলেন সু। তা দিয়ে কয়েক দিনের খাবারের সংস্থান হলো বটে কিন্তু এখন অর্থ জোগাড়ের জন্য বিক্রি করার মতো আর কিছু অবশিষ্ট নেই তার।

৩৬ বছর বয়সী সুর স্বামী এখন তাদের বস্তির আশপাশের নালাগুলোয় খাবার খুঁজে বেড়ান। অশ্রুসজল নয়নে সু জানান, ‘মানুষের হাতে এখন কোনো টাকা-পয়সা নেই। তাই তারা বাধ্য হয়ে ইঁদুর ও সাপ খাচ্ছে। সন্তানদের মুখে এগুলোই তুলে দিতে হচ্ছে আমাদের।

ইয়াঙ্গুন শহরের উপকণ্ঠে লেইং থার ইয়ার অঞ্চলের বস্তিতে বাস সু ও তার পরিবারের। এটি ইয়াঙ্গুনের আশপাশের দরিদ্রতম এলাকাগুলোর একটি। বস্তির বাসিন্দারা রাত হলেই ফ্লাশলাইট হাতে বেরিয়ে পড়েন নিশাচর প্রাণী ও কীট শিকারে। ক্ষুধা নিবারণে এছাড়া আর কী-ইবা করার আছে তাদের।

অবশ্য মিয়ানমারের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য ইঁদুর, সরীসৃপ ও পতঙ্গ খাওয়া নতুন কিছু না। কিন্তু কিছু নগরাঞ্চলের বাসিন্দারাও এখন এগুলো খেয়ে উদরপূর্তি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

৪০ হাজারের বেশি কভিড-১৯ রোগী ও এক হাজার মৃত্যু নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মহামারীতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম মিয়ানমার। করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের কারণে মা সুর মতো মিয়ানমারের হাজার হাজার মানুষ কাজ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

লেইং থার ইয়ারের স্থানীয় প্রশাসক নায় মিন তুন বলেছেন, তার এলাকায় ৪০ শতাংশের পরিবার সরকারের তরফ থেকে সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ কর্মক্ষেত্রই বন্ধ থাকায় মানুষ তাদের আয়ের সংস্থান হারিয়েছে এবং খাদ্যের সন্ধানে মরিয়া হয়ে পড়েছে।

এদিকে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় আইনপ্রণেতা বলেছেন, এ অঞ্চলের বাসিন্দারা সরকারি সহায়তা ও ব্যক্তিগত অনুদান পেয়েছেন। তবে সবাইকে এ সহায়তার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি।

কেবল করোনা মহামারীই যে মিয়ানমারের মা সুর মতো দীনহীন মানুষগুলোকে বিপদে ফেলেছে, তা নয়। বরং মহামারীর আগে থেকেই দেশটির মোট ৫ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ চরম দারিদ্র্যে পতিত হওয়ার ঝুঁকিতে ছিলেন। করোনা কেবল তাদের সংকট আরো গভীর করেছে। বর্তমানে তাদের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে সেখান থেকে অনেকেই আর ফিরে আসতে পারবেন না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মিয়ানমার সরকার দরিদ্র পরিবারগুলোকে এককালীন খাদ্য সহায়তা ও সামান্য কিছু নগদ প্রণোদনা দিয়েছে বটে, কিন্তু পরিবারগুলোর দাবি প্রয়োজনের তুলনায় এ সহায়তা খুবই অপ্রতুল।

গত সেপ্টেম্বরে এক পূর্বাভাসে বিশ্বব্যাংক বলেছে, করোনা মহামারীর কারণে পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মাতো দারিদ্র্য বাড়তে পারে। এ অঞ্চলের প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ হয় দারিদ্র্যসীমার নিচেই থেকে যাবেন অথবা নতুন করে দারিদ্র্যে পতিত হবেন। রয়টার্স

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *