মার্কিন অর্থনীতিতে বর্ণবৈষম্যের ক্ষতি ১৬ ট্রিলিয়ন ডলার

বর্ণবৈষম্যের কারণে মার্কিন অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে ১৬ ট্রিলিয়ন ডলার। বৃহস্পতিবার সিটিগ্রুপের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর এএফপি।

অসম মজুরি, আবাসন বৈষম্য, শিক্ষায় বৈষম্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি সংকটের কারণে মার্কিন অর্থনীতি এই বড় আকারের লোকসানে পড়েছে। বিষয়টির কথা মাথায় রেখে ১০০ কোটি ডলারের একটি উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সিটিগ্রুপ।

এক বিবৃতিতে সিটিগ্রুপের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল করবেট বলেন, একটি ন্যায্য ও সমন্বয়মূলক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বর্ণবাদ এবং বর্ণগত সম্পদবৈষম্য কমিয়ে আনা। এজন্য আমরা সেখানে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অবশ্য আমরা এটাও জানি, অনেকেই সে পথে এগোবে না।

কভারে এক কৃষ্ণাঙ্গ ও এক শ্বেতাঙ্গের ফিস্ট-বাম্পের ছবিসহ ১০৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বিভিন্ন বিষয় সামনে আনা হয়, যার মধ্যে রয়েছে পুলিশিং ও ভোটের অধিকার। বর্ণবাদ নিয়ে মার্কিন জনগণের উদ্বেগ এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর এর বিহিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের চাপের মধ্যে সিটিগ্রুপের এ ঘোষণা এল।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিকদের বড় আকারের বেতনবৈষম্যের পেছনে দীর্ঘদিনের কর্মবৈষম্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে মানসম্মত শিক্ষাপ্রাপ্তির অসম সুযোগের ভূমিকা রয়েছে।

ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানে বৈষম্যও এখানে ভূমিকা পালন করেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গদের অন্য তালিকায় রাখা এবং তাদের জন্য অনুকূল নয় এমন শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। শ্বেতাঙ্গদের নেতৃত্বাধীন কোম্পানির চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গ নেতৃত্বাধীন কোম্পানি ঋণ পেতে অধিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়। সব ধরনের শর্ত পূরণ করলেও শেষ মুহূর্তে তাদের ঋণ অনুমোদন আটকে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। এটাকে অবশ্যই বর্ণবৈষম্য হিসেবে দেখতে হবে বলে মনে করছে সিটিগ্রুপ।

বর্ণবৈষম্য দূর করা হলে তা আগামী পাঁচ বছরে মার্কিন প্রবৃদ্ধিতে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অবদান রাখবে বলে মনে করছে সিটিগ্রুপ। এক্ষেত্রে বেশকিছু পদক্ষেপের কথা ভাবছে সিটি, যার মধ্যে রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গদের ৫৫ কোটি ডলারের আবাসন সহায়তা প্যাকেজ। এর মাধ্যমে ঘর নির্মাণ এবং মালিকানা পাওয়ার সুযোগ পাবে তারা। অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু সঞ্চয় প্রতিষ্ঠান, কৃষ্ণাঙ্গ মালিকানাধীন সরবরাহকারী ও উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা।

নিজেদের বর্ণবাদমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে কঠোর নীতি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সিটিগ্রুপ। সফটওয়্যার নকশা ও বিপণনে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতিনিধিত্বে বৈষম্য ঠেকাতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে ব্যাংকটি।

দেশব্যাপী বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরে মার্কিন কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, আরো বিস্তৃত ও মজবুত পদক্ষেপ নেয়ার দরকার আছে তাদের। পুলিশি হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কয়েক মাস ধরে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। এ বিক্ষোভের ঢেউ লেগেছে ইউরোপ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ায়।

ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্বে সংখ্যালঘুদের অনুপস্থিতির পেছনে তাদের যোগ্যতার ঘাটতি দায়ী—এমন বর্ণবাদী মন্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ওয়েলস ফার্গোর শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) চার্লস শোয়ার্ফ। গত জুনে মন্তব্যের পর তা ফের কর্মীদের কাছে পাঠানো একটি মেমোতে পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। গত মঙ্গলবার এটা প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং শোয়ার্ফ। তার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমার ওই অসংবেদনশীল মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইছি।

চলতি মাসের শুরুতে জেন ফ্রেজারকে প্রথম নারী সিইও হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সিটিগ্রুপ। এছাড়া ব্যাংকটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মার্ক ম্যাসন একজন আফ্রিকান-আমেরিকান।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *