মধ্যপ্রাচ্যে যে স্বার্থসিদ্ধিতে আরব ইসরায়েল মধ্যস্থতায় ওয়াশিংটন

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ঐতিহাসিক এক বৈঠকে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মিলিত হয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), বাহরাইন ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা। এর মধ্য দিয়ে ওই দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা বলা হলেও এর নেপথ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবসা। বলা হচ্ছে, এ নিয়ে দেশগুলো যে চুক্তি করবে তার মূল ফ্যাক্টর হলো অস্ত্র কেনাবেচা। ইউএই, বাহরাইন এ চুক্তিতে সম্মতি দেয়ার পর মার্কিন কর্মকর্তারা একে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’ হিসেবে অভিহিত করছেন। খবর আল জাজিরা।

উপসাগরীয় সহযোগিতাবিষয়ক পরিষদ জিসিসির প্রথম দেশ এবং আরব দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় দেশ হিসেবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে ইউএই। এ চুক্তির ফলে ইসরায়েলের ওপর ইউএইর অর্থনৈতিক অবরোধের ইতি ঘটল। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক অস্ত্র ইউএইতে আসার পথ সুগম হবে। কিন্তু এ চুক্তিকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করেছে ফিলিস্তিনিরা। আঞ্চলিক মিত্র তুরস্ক ও ইরানের সঙ্গে একই সুরে তারা কথা বলেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর এ সম্পর্কে অভূতপূর্ব ভূরাজনৈতিক সংকট দানা বাঁধতে পারে বলে আল জাজিরার কাছে জানিয়েছেন অনেক বিশ্লেষক।

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির অস্ত্র ও নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক উইলিয়াম হার্তুং বলেন, এ চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হলো অস্ত্র বিক্রি। দীর্ঘদিন ধরে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও বৃহৎ ড্রোন কেনার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল আবুধাবি। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক সম্পর্কের কারণে এসব অস্ত্র বিক্রি করতে পারছিল না যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু শুরু থেকেই ট্রাম্প অস্ত্র বিক্রির বাজার অনুসন্ধান করছিলেন। এক্ষেত্রে তিনি ইউএইকে একজন পুরনো ও ভালো খদ্দের হিসেবে দেখতে থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশে সমরাস্ত্র বিক্রি কর্মসূচি থেকে প্রদত্ত উপাত্তের বরাতে ফোরাম অন দ্য আর্মস ট্রেড (ফ্যাট) জানায়, ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে শতকরা ৪২ শতাংশ। বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র নির্মাতা দেশটির অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার। বৈশ্বিক অস্ত্র বিক্রির প্রবৃদ্ধির চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা। সেখানে ২০১৮ সালে ১ হাজার ১৮০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি হয়েছে। ২০১৯ সালে তা ১১৮ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কিনেছে মরক্কো। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে রাবাত।

ফোরাম অন দ্য আর্মস ট্রেডের উপাত্তে আরো দেখা গেছে, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে ইউএই। বাহরাইন, কাতার ও সৌদি আরব কিনেছে যথাক্রমে ৩৩৭ কোটি, ৩০০ কোটি ও ২৭০ কোটি ডলারের অস্ত্র। হার্তুং বলেন, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র কিনতে হয়তো সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে বাহরাইন। মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম অর্থনীতি সৌদি আরবও এ পথ অনুসরণ করবে বলে মনে হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসন এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার পর অবশ্যই সুবিধা পেয়েছে বাহরাইন। ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের একটি সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে হার্তুং বলেন, মানবাধিকারবিষয়ক শর্ত তোয়াক্কা না করেই বাহরাইনের কাছে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *