কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। লকডাউনের এই সময়ে বাসাতেই কাটছে তার বেশিরভাগ সময়। তবে সম্প্রতি প্রিয় সহকর্মী এন্ড্রু কিশোর চলে যাওয়ায় একেবারেই ভালো নেই এই শিল্পী। সাবিনা ইয়াসমিনের দীর্ঘদিনের সহকর্মী ছিলেন এন্ড্রু কিশোর। তাদের জুটির অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে বাংলা সিনেমায়। জুটি হিসেবে চলচ্চিত্রে এতগুলো শ্রোতাপ্রিয় গান আর কারো আছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। একটি দ্বৈত গানে কণ্ঠ দিতে গিয়ে এন্ড্রুর সঙ্গে পরিচয় হয় সাবিনার। সেই স্মৃতি মনে করে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, সালটা ঠিক মনে নেই৷ ১৯৭৪ কিংবা ৭৫ এর দিকে হবে।
সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান ভাইয়ের একটি গান গাইলাম আমি আর এন্ড্রু। সেই থেকে আমাদের জুটি শুরু। এরপর দুজন কত গানে যে একসঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছি তার হিসেব নেই। শ্রোতারাও গান গুলো এতটা পছন্দ করেছেন, এখনও গান গুলো সমান জনপ্রিয়। এন্ড্রুর সাথে কত যে স্মৃতি আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু আজ সব শুধুই স্মৃতি। আর দেখা হবে না, কথা হবে না, গান গাওয়া হবে না একসাথে। ভাবতেই বুকের ভেতরটা কেঁদে ওঠে। তবে এটা নিশ্চিত যে, এন্ড্রু কিশোরের মতো শিল্পী আমরা আর পাবো না। বিশেষ করে চলচ্চিত্রের গানের জন্য এমন নিখুঁত কণ্ঠ আর পাওয়া যাবে না৷ শুধু একসাথে সিনেমার গান গেয়েছি আমরা তা নয়।
একসঙ্গে দেশ-বিদেশে অনেক অনুষ্ঠান করেছি। এন্ড্রু ছিলো আমার ভাইয়ের মতো। বন্ধুর মতো। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে সাবিনা আরো বলেন, আমার একটাই দুঃখ। এন্ড্রু তার অসুস্থতা নিয়ে আগে থেকে সতর্ক হয়নি। চিকিৎসকের কাছে যায়নি। আমি অনেকবার বলেছি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে। কারণ ওর লক্ষনগুলো ভালো ছিলো না। ওজনও কমে যাচ্ছিলো। বলতো, ভালো হয়ে যাবো। এরপর অনেক পরে অনেকটা জোর করেই সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য এন্ড্রুকে রাজি করিয়েছিলাম। সেখানে যাওয়ার পর ক্যানসার ধরা পড়লো। তবে নিয়মিত কথা হয়েছে আমার ওর সাথে। কখনো এন্ড্রু বলেনি সে খারাপ আছে, সব সময় ফোনে বলতো সে ভালো আছে।
পরে সব কিছু ভালোর দিকেই যাছিলো। কারণ ওর শরীর ক্যানসারের জীবাণুমুক্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরে জীবাণু শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। গত ১১ই জুন সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে এন্ড্রু। পরদিন আমাকে ফোন করে। বলল, আপা আমি ঢাকা চলে এসেছি। আমার জন্য দোয়া করবেন। আবাক হলাম। কারণ আসার আগে আমাকে কিছুই জানায়নি। তখনও বুঝিনি কেন এতো তাড়াহুড়ো করে সে দেশে এসেছে। ঢাকা থেকে চলে গেলো রাজশাহী। সেখান থেকে হঠাৎ একদিন ফোন দিয়ে বললো, আপা আমাকে মাফ করে দিয়েন। পরে জানলাম সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে আরো। আমার সঙ্গে এন্ড্রুর শেষ কথা হয় ১০ কি ১১ দিন আগে। সেদিনও বলেছিলো, আপা আমাকে মাফ করে দিয়েন।