বেগুনি ধানে ব্যাপক সাড়া, গাছ দেখতে ক্ষেতে ভিড়

মৌলভীবাজার: ধানগাছ দেখতে জনসমাগম! সোনালি ধানের দেশে বিষয়টি একটু হোঁচট খাওয়ারই মতো। তবে ঘটনা সত্যি।
প্রতিদিনই কেউ না কেউ সালেহ আহমদের ক্ষেতে আসনে গাছ দেখতে। সবুজে মোড়া ক্ষেতের মধ্যে হঠাৎ বেগুনি ধানগাছ তো দৃষ্টি কাড়ারই কথা।

শ্রীমঙ্গল উপজেলায় আশিদ্রোণ ইউনিয়নের তিতপুর গ্রামে ৪৫ শতাংশ (দেড় বিঘা) জামিতে বেগুনি ধান (Purple Rice) চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কৃষক সালেহ আহমদ। পেশায় দলিল লেখক। নেশায় মাছ চাষি। নিজেদের প্রায় ছয় বিঘা জমি দ ‘জন বর্গাচাষি দিয়ে চাষ করালেও স্বস্তি পাচ্ছিলেন না তিনি।

বাবা আবদুল গফুর ছিলেন এলাকার সফল কৃষক। তিনি মারা যান ১৯৯২ সালে। তারপর থেকে জমিগুলো বর্গাচাষিরাই চাষ করে আসছিল। কিন্তু এবার বেগুনি ধানের প্রেমে ধরা পড়লেন তিনি। কৃষিতে ফিরে আসা ও ব্যতিক্রমী জাতের এই ওষুধি ধান কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এবার নিজেই তিনি কৃষিতে নেমে পড়লেন।

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বেগুনি ধানের এলাকা তিতপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সালেহ নিজেই তার জমির বেগুনি ধানগাছে স্প্রে করছেন। পাশেই দেখা গেলো হলদে প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে এধান থেকে ওধানের নরম পাতায়। .কৃষক সালেহ আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রাকৃতিক রোগবালাই থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিমপাতা সিদ্ধ করে এর পানি ধান গাছে স্প্রে করছি। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশক স্প্রে করা থেকে বিরত থেকে এই প্রাকৃতিক ভেষজ স্প্রে করি। যাতে ক্ষতিকর পোকা ধানের পাতায় বসতে পারে না। এভাবে এই ধান মানবদেহের জন্যও উপকারি হবে। এই ধান এমনিতেই ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি উপকারি বলে শুনেছি।

এই ধানের বীজ সংগ্রহ সম্পর্কে তিনি বলেন, আগস্টের ২ তারিখে মৌলভীবাজারে আমার মামাত ভাই বাহারাম খানের কাছ থেকে ৫ কেজি ধান সংগ্রহ করে এনে বীজতলা বানিয়ে সেখানে রোপণ করি। প্রায় ৩৫ দিন পর বীজতলা থেকে চারাগুলো তুলে ধানক্ষেত্রে রোপণ করেছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী আগ্রহায়ণে প্রায় আঠারো-বিশ মণ ধান পাওয়ার কথা।

‘আমার কৃষক বাবার স্মৃতিকে শ্রদ্ধাভরে ধরে রাখতে এবং স্থানীয় কৃষকদের মানবশরীরের জন্য উপকারী এই ধানটির প্রচার ঘটাতেই মূলত আমি কৃষিতে এসেছি। ’

মাটিতে সারপ্রয়োগ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে জমিতে টিএসপি, জিপসাম, এমওপি, জিংক ইত্যাদি সার দিয়েছি। এছাড়াও দশ গ্রাম করে দু’প্যাকেট ভিথাগু ব্যবহার করছি। এই ধান পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করছি। উৎপাদন ভালো হলে আগামীতে ব্যাপক আকারে চাষ করবো।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এই বেগুনি ধান শ্রীমঙ্গলে প্রথম চাষ হয়েছে। কৃষক সালেহ আহমদ সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছেন। আমরাও তার এই ধানটি পর্যবেক্ষণ করছি। এ ধান থেকে ফলন কেমন আসে? কৃষক পর্যায়ে সাড়া কেমন ফেলে? চালটা কেমন হয়? খেতে কেমন? শষ্য কাটার করার পর এগুলো আমরা বুঝতে পারবো। এ ধানটি চাষের ব্যাপারে পরামর্শ আমরা ওনাকে দিয়ে যাচ্ছি। ’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বেগুনি ধানের সূচনা সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, গাইবান্ধা জেলার একজন কৃষক যিনি নিজের জমিতে নিজেই ধান চাষ করেন। ৬/৭ বছর আগে তিনি প্রথম এই ধানটি আবিষ্কার করেন। তারপর কয়েকটা ধানগাছ থেকে একটু একটু করে ধান সংগ্রহ করে পরবর্তীকালে ৩/৪ বিঘায় চাষের মাধ্যমে এ ধানের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছিলেন। এরপর কুমিল্লার কয়েকজন কৃষকও এ ধানটি চাষ করেন। গত বছর কিন্তু মৌলভীবাজারের এক কৃষক কুমিল্লা থেকেই বীজ নিয়ে এসে চাষ করেছিলেন। ’

‘এই বেগুনি ধানের জাত স্থানীয় এবং ফলন কম। আমাদের উচ্চ ফলনশীল ধানের মতো নয়। যেমন- আমন ধান, বিঘা প্রতি ১৬ মণের নিচে উৎপাদন কোথাও নেই। এটি তেমন নয়। এটি বিঘাপ্রতি ৮/৯ মণের বেশি হবে না’ জানান নিলুফার।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *