যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে দেশে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)। এটি দেশে ‘অটোগ্যাস’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের পাশাপাশি অটোগ্যাসের দামও নির্ধারণ করছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কিন্তু সিলিন্ডার গ্যাসের মতো অটোগ্যাসও বিইআরসির বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না। গত তিন মাসে কমিশনের আদেশের তোয়াক্কা করছেন না অটোগ্যাস অপারেটররা। ফলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে ব্যবহারকারীদের মধ্যে। অন্যদিকে কমিশন নির্ধারিত দামে অটোগ্যাস কিনতে না পারায় বিপাকে পড়ছেন ফিলিং স্টেশন মালিকরা।
তারা বলছেন, সরকার অটোগ্যাসের যে দাম বেঁধে দিয়েছে সেই দামে তারা অপারেটররা তাদেরকে অটোগ্যাস দিচ্ছে না। অন্যদিকে গ্রাহকরা সরকার নির্ধারিত দামে অটোগ্যাস চাইছেন। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি বিক্রি করলে ভোক্তা অধিকার অভিযান চালাচ্ছে।
বিইআরসি আদেশ অনুযায়ী, চলতি জুনের জন্য প্রতি লিটার অটোগ্যাসের দাম ৪১ টাকা ৭৪ পয়সা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অটোগ্যাস স্টেশনগুলোতে এ দামে বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু কমিশন দাম নির্ধারণের পর থেকে কোথাও এ দামে অটোগ্যাস বিক্রি হচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীতে ফিলিং স্টেশনগুলোতে প্রতি লিটার অটোগ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা লিটার। গাবতলী, আমিনবাজার, মালিবাগ, মিরপুর, সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন এলপি অটোগ্যাস স্টেশনগুলোতে ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৯৫ শতাংশ ফিলিং স্টেশনে অটোগ্যাস বিক্রির নির্ধারিত কোনো দাম নেই। ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিইআরসি দাম নির্ধারণ করার পর থেকে অটোগ্যাসের দামে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। প্রতি মাসে দাম ওঠানামা করায় জটিলতায় পড়ছেন স্টেশন মালিকরা।
অভিযোগ রয়েছে, অপারেটরদের কাছ থেকে যেসব ফিলিং স্টেশন অটোগ্যাস কিনছে, তারাও ক্রয়ের কোনো কাগজপত্র ফিলিং স্টেশন মালিকদের সরবরাহ করছে না।
‘এলপিজি অটোগ্যাস স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনারর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ সভাপতি হাসিন পারভেজ বণিক বার্তাকে বলেন, অটোগ্যাসের দাম নিয়ে বিইআরসি-লোয়াব জটিলতায় বিপাকে পড়েছেন স্টেশন মালিকরা। এ অবস্থার নিরসন করা যাবে, যদি আগামী দুই বছর অটো গ্যাসের দাম ৪৪-৪৫ টাকার মধ্যে স্থির রাখা যায়।
সিএনজির বিপরীতে অটোগ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে সারা দেশে বেসরকারি বেশ কয়েকটি কোম্পানি অটোগ্যাস স্টেশন স্থাপনের কাজ শুরু করে। ২০১৫ সালে সিএনজি গ্যাস স্টেশনের অনুমোদন বন্ধ করে দেয়ার পর ৩৫০-৪০০ অটোগ্যাস স্টেশন স্থাপিত হয়েছে। বসুন্ধরা, ওমেরা, বিএম, জি-গ্যাস, পেট্রোম্যাক্স, লাফস, টোটাল গ্যাসসহ অন্তত আট-নয়টি কোম্পানি অটোগ্যাস স্থাপনের অনুমতি পেয়েছে।
এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব) সভাপতি আজম জে চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, বিইআরসি যে দামটা ঠিক করেছে, সেটি সঠিক নয়। এক মাস ধরে কমিশনের সঙ্গে দামের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তারা যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেটি সম্ভব হলে অপারেটররা সবাই বাজার নির্ধারিত দামে অটোগ্যাস সরবরাহ করতে পারবে।
অটোগ্যাসের দামের বিষয়টি জানতে চাইলে বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বণিক বার্তাকে বলেন, বিইআরসির পুনর্নির্ধারণ করা দামে বাজারে এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। অটোগ্যাসও পুনর্নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে। তবে যারা বিক্রি করছে না তাদের বিরুদ্ধে কমিশনের আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। করোনার কারণে মাঠপর্যায়ে আমরা খুব বেশি তদারকি করতে পারছি না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করব।