বাড়ির আঙিনায় নারীদের পুষ্টি বাগান!

কুষ্টিয়া: ‘পাট কাঠির বেড়া, তার উপরে পলিথিন আর পাটকাঠি দিয়েই চালা দেওয়া রান্না ঘর। রান্না ঘরের পাশের একটু জায়গা থেকে বাঁশের কঞ্চি বেয়ে উঠছে কুমড়া গাছের লতাগুলো। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেয়ে উঠছে মেটে আলুর লতাও। কিছু কিছু ঘরের চাল ছেয়ে গেছে চাল কুমড়ার লতায়। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে লতানো এই গাছগুলো। ঘরের এক কোণে বাঁশের মাচায় ভর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে পুঁইশাক, করলা, সিম, বরবটি, লাউ, ঝিঙ্গা, চিচিংগা। নতুন লাগানো পেঁপে গাছেও এসেছে ফুল, ধরেছে পেঁপে। এ যেন চোখ ধাঁধানো দৃশ্য।’

এগুলো সবই ভূমিহীন মানুষদের গড়ে তোলা ফসলের চিত্র। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা আশ্রয়ন প্রকেল্পর বাসিন্দাদের বাড়ির আঙিনা এবং ঘরের চালা, রান্না ঘরের চালা তারা সবজিতে ভরে তুলছেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িগুলো এখন এক একটি পুষ্টির বাগানে রূপ নিয়েছে। মৌসুমি নানা সবজির চাষ করছেন বাড়ির আশেপাশে। রাস্তার দুই ধারের পতিত জমিতে মাচা করে শিম, করলা ও চালকুমড়ার চাষ করেছেন। স্বল্প পরিসরে বসতবাড়ির আঙিনায় এসব সবজি চাষ করে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে তেমন পরিবেশও সুন্দর হচ্ছে। পুরুষের চেয়ে নারীরাও এগিয়ে এ চাষের ক্ষেত্রে।
আর বাড়ির আশেপাশের এসব জমি এবং ঘরের চালায় সবজি চাষ সম্পর্কে তাদের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি অফিস। সেই সঙ্গে বিনামূল্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিটি ঘরে ঘরে এসব সবজি বীজ দিয়ে সহায়তা করেছে কৃষি অফিস। সেই বীজ রোপন করে পরিচর্যা করেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব মানুষ। বাড়ির আশেপাশে এসব সবজি চাষ করে বেশ খুশি তারা।

আমলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রাশিদা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, বাড়ির পাশে এবং ঘরের চালায় যে সবজি করা যায় তা বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত। বাজারে যেসব সবজি পাওয়া যায় তার চেয়ে অনেক ভালো। বাজারে বেশিরভাগই সার ও বিষ দেওয়া সবজি।

তিনি বলেন, আমি ঘরের এক পাশে চালকুমড়ার বীজ রোপন করেছিলাম। চালকুমড়ার লতা এখন ঘরের চাল ছেয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি চালকুমড়াও পেয়েছি।

হাশেম আলী জানান, করোনার মধ্যে কৃষি অফিসের লোকজন এসে আমাদের এখানে বিনামূল্যে বিভিন্ন সবজির বীজ দিয়ে গিয়েছিল। আমি লাউ, চালকুমড়া, পুঁইশাকের বীজ নিয়েছিলাম। বাড়ির আঙিনায় সেগুলো চাষ করেছি।
সকেরা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, আমি চালকুমড়া ও করলার বীজ পেয়েছিলাম। সেগুলো রোপনের পরে লতাগুলোকে আমি বাঁশের মাচা করে তুলে দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমি ১০-১৫টা কুমড়া পেয়েছি। করলা এখনো ধরেনি। তবে ফুল এসেছে।

শুধু রাশিদা, হাশেম আলী সকেরা খাতুন নয়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জিয়ারুল ইসলাম, সুদর্শন কুমার, জরিনা খাতুন, নুরজাহান বেগম, মেঘনা খাতুন, হালিমা খাতুন, আনোয়ারা খাতুনের মতো প্রায় সবাই বাড়ির আঙিনায় ও ঘরের চালা ব্যবহার করে সবজি চাষ করেছে। এতে পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্প যেন সবজি বাগানে পরিণত হয়েছে।

আমলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আমলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১২০ ঘর মানুষের বসবাস। প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় তারা সবজি চাষ করেছে। এসব সবজি চাষের মাধ্যমে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে অন্যদিকে বাজারে সব সময় সবজি কিনতে যেতে হচ্ছে না। নারীরা বাড়িতে খুব সহজেই এসব সবজি চাষ করছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আমি নিয়মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব সবজি পরিদর্শন করি। বসত বাড়িতে এসব সবজিতে তেমন একটা খরচ ও পরিচর্যার দরকার হয়না।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, করোনা ভাইরাস দুর্যোগ মোকাবিলায় কৃষকদের বসত বাড়িতে পতিত জায়গায় ফসল উৎপাদনের নিয়ে আসার লক্ষে মিরপুর উপজেলা পরিষদের সহযোগিতায় মিরপুর উপজেলার ১৮৫টি পরিবারের মধ্যে বিভিন্ন সবজির বীজ বিতরণ করেছি। উপজেলার আমলা আশ্রয়ন প্রকল্পে ১২০ ঘর এবং মালিহাদ ইউনিয়নের মালিহাদ আশ্রয়ন প্রকল্পে ৬৫ ঘর মানুষের মধ্যে বসত বাড়িতে রোপণের জন্য মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ঝিঙ্গা, করলা, লালশাক, সবুজশাক, ঢেঁঢ়স, পুঁইশাক, গীমাকলমি, পেঁপে ও বাঙির বীজ বিনামূল্যে দিয়েছি। যাতে তারা বসতবাড়িতে এসব সবজি চাষ করে।

মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন বাংলানিউজকে বলেন, মিরপুর উপজেলার আমলা আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ গ্রামাঞ্চলের মানুষ বসতবাড়িতে সবজি চাষ করছে। যার ফলে পারিবারিক পুষ্টি ও আর্থিক দিক দিয়েও লাভবান হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নে মিরপুর উপজেলার সব পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য আমরা চেষ্টা করে চলেছি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *