বাংলাদেশকে সাহায্য করতে প্রস্তুত আইএমএফ

পরিমাণ উল্লেখ না করলেও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফ এ ব্যাপারে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে সংস্থার একজন মুখপাত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, বাংলাদেশ ঋণের আবেদন জানানোর পর পরই আইএমএফ ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলবে। এ ধরনের সাহায্যপ্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পর পরই বাংলাদেশকে বিবেচনা করছে আইএমএফ।

প্রতিবেদনে রয়টার্স বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বর্তমানে ৪১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দ্রুত অগ্রগতির দেশ হিসেবে কয়েক বছর ধরেই বিশ্বে স্থান করে নিয়েছে দেশটি। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট জ্বালানি সংকটে কিছুটা বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ।
এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ঋণ চেয়েছি, তার মানে এই নয় যে, আমরা খারাপ অবস্থায় রয়েছি। আর মাত্র কিছুদিন, এরপর বাংলাদেশই বিশ্বকে ঋণ দেবে।

পত্রপত্রিকায় বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে। আর মুদ্রা তহবিলের যে নিয়মকানুন, তাতে সর্বোচ্চ ১ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী আবেদন করা ঋণের পরিমাণ উল্লেখ করেননি। তিনি বলছেন, আইএমএফ-এর রীতিনীতি মেনেই পরিমাণটা নির্ধারিত হবে।

তিনি বলেন, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষায় এখন আমাদের ঋণ দরকার। সে জন্য আইএমএফ-এর কাছে ঋণের আবেদন করা হয়েছে। আর শুধু আইএমএফ নয়; বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবিসহ সব দাতাসংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ সহায়তা চাওয়া হবে। সব জায়গায় সব সময় চেষ্টা করি আমাদের যে ঋণ প্রয়োজন হয়- তা ভালো সুদে ও ভালো শর্তে নিতে।

বুধবার ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠক শেষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

‘বাংলাদেশের ওপর উন্নয়ন সহযোগীদের পূর্ণ আস্থা আছে’ -এমন দাবি করে তিনি বলেন, ঋণ দেয়ার জন্য তারা আমাদের পিছে পিছে আছে। কারণ তারা জানে যে, বাংলাদেশ একটি ভালো দেশ, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আছে। বাংলাদেশ সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারবে।
প্রসঙ্গত: সম্প্রতি আইএমএফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আমাদের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে আছে এবং তাদের কাছ থেকে ঋণ নেয়া হবে না বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।

‘তারপর হঠাৎ এমন কী পরিস্থিতি হলো যে আবার আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়া হয়েছে’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তখন আমরা যদি টাকা চাইতাম, আইএমএফ নানা শর্ত দিত; দর-কষাকষির জন্য আমরা সুযোগ পেতাম না। সে জন্য তখন চাইনি। তখন আমরা একটু ভাব দেখাইছি। এটা দেশের স্বার্থে করা হয়েছে। ঋণ নিলে সবার জানার অধিকার আছে। আমার কাজ হচ্ছে তার ব্যাখ্যা দেয়া।

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আর কিছুদিন, এরপর ঋণ থাকবে না। আমরা তো বলেছিলাম ঋণ দেবো। আমি আবারও বলি আমরা ঋণ দিতে পারবো।

‘ডলার সংকট মোকাবিলায় অনেক উদ্যোগ নেয়ার পরও কোনো কাজে আসছে না কেন’- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজ হবে, একটু সময় লাগবে। এক্সপোর্ট বাড়ছে, রেমিট্যান্সও বাড়ছে। গত বছর রেমিট্যান্স কিছুটা কম হলেও চলতি অর্থবছর আশা করছি ভালো রেমিট্যান্স পাব। রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্টের মাধ্যমেই ডলারের চাহিদা মেটানো হবে।

প্রসঙ্গক্রমে অর্থমন্ত্রী বলেন, কিছু আমদানিকারক মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি করে আমদানি করছে। আমরা এসব অনিয়ম খতিয়ে দেখছি, তবে ডলারের মূল্য নির্ধারিত হবে চাহিদার ও জোগানের ভিত্তিতেই।

ব্যাংক খাতে সুদহার ৬-৯ উঠিয়ে দেয়ার কথা বলেছে আইএমএফ- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি এখন ভালো অবস্থানে আছে। সুদের হার যদি ৬-৯ নির্ধারিত না করা হতো তাহলে কোভিডের সময় ছোট, বড়, মাঝারি কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই টিকে থাকতে পারত না। ভয়াবহ বেকারত্ব সৃষ্টি হতো। আমি মনে করি ব্যাংক খাতে আমানত ও সুদের হার ৬-৯ করার উদ্যোগটি ভালো। ‘সুদহার ৬-৯ করার কারণে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। বেসরকারি খাতও চাঙা হয়েছে। সুতরাং আইএমএফ যে কথা বলেছে, তা সঠিক নয়।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *