বছরের শেষে অনুভূত হচ্ছে ২০২০-এর ভয়াবহতা

ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বে চলছে ছুটির মৌসুম। আর এর মধ্যে হানা দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। ফলাফল হিসেবে নিউইয়র্কে সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে ইউরোপ। কাগজে-কলমে এখনো চলছে ২০২১ সাল, কিন্তু সংক্রমণ পরিস্থিতি দেখলে মনে হবে ঠিক যেন ২০২০ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। প্রশ্ন উঠেছে, আরো একবার কি কভিড-১৯ মহামারীর ভয়াবহতা দেখতে চলেছে বিশ্ব?

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যে মার্কিনরা এখনো কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা গ্রহণ করেনি, তাদের অতিসত্বর টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন সরকার। সংক্রমণ ঠেকাতে ন্যাশনাল ফুটবল লিগের (এনএফএল) মতো টুর্নামেন্ট স্থগিত করা হয়েছে। চলতি মৌসুমের জন্য রকেটেস ক্রিসমাস শোয়ের আয়োজন বাতিল করা হয়েছে। অথচ ছুটির মৌসুমের জনপ্রিয় এ শোয়ের অপেক্ষায় ছিল অসংখ্য মানুষ।

এতসব বিধিনিষেধের পরেও শঙ্কা কাটছে না। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো ওমিক্রন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনো জানা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওমিক্রন ডেল্টা ধরনের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রমণযোগ্য। ফলে এটি ছড়াতে শুরু করলে বিশ্বের হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ বাড়বে। অসুস্থ হওয়ার ভয়ে বিশ্বের অনেক দেশের অনেক মানুষই তাদের বেড়ানোর পরিকল্পনা স্থগিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন শুরুতে বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে তেমন কঠোর হয়নি। কিন্তু এখন তারাও শঙ্কিত। ফলে দেশটির নাগরিকদের টিকা নিতে বারবার করে অনুরোধ করা হচ্ছে। হোয়াইট হাউজের করোনাভাইরাস রেসপন্স-বিষয়ক মুখপাত্র জেফ জায়েন্টস বলেন, যারা টিকা দেননি তারা নিজেদের তো ক্ষতি করছেনই, পাশাপাশি এ শীতে নিজের পরিবার ও আশপাশের মানুষের অসুস্থতার জন্যও দায়ী হবেন। শিগগিরই হয়তো হাসপাতালগুলো পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।

এরই মধ্যে নিউইয়র্কে পূর্ণ শক্তিতে ছড়িয়েছে ওমিক্রন। শহরটির মেয়র বিল ডি ব্লাসিও বলেন, একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হয়েছে। তবে মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা গত বছরের তুলনায় এখনো কম আছে। ফলে এখন থেকেই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে মোড় নিতে পারে।

মহামারী বিশেষজ্ঞ ড. স্ট্যানলি ওয়েসিস বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। যারা টিকা নেননি তাদের টিকার আওতায় আনতে ও যারা দুই ডোজ করেই টিকা নিয়েছেন তাদের দ্রুত বুস্টার ডোজের আওতায় আনতে হবে। মহামারীর বাস্তবতাকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই।

কেবল যুক্তরাষ্ট্রই নয়, ইউরোপের দেশগুলোও নিজের মতো করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা শুরু করেছে। এরই মধ্যে ডেনমার্কে থিয়েটার, কনসার্ট হল, বিনোদন পার্ক ও জাদুঘর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্পেনে ঐতিহ্যবাহী বছর শেষের ডিনার পার্টির আয়োজন বাতিল করেছেন স্থানীয় নাগরিকরা। যুক্তরাজ্যে নতুন করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস। যদিও যুক্তরাজ্যে এখনো আনুষ্ঠানিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি কিন্তু জনগণকে যতটুকু সম্ভব সামাজিকীকরণ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

এ অবস্থায় কমতে শুরু করেছে থিয়েটারের বুকিং, আকাশপথে যোগাযোগের বুকিংয়ের সংখ্যা। ফলে আরো একবার কভিড-১৯ আঘাত বিশ্বের ব্যবসা পরিস্থিতির ওপর হানতে যাচ্ছে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আবারো ২০২০ সালের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে কিনা সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *