প্রযুক্তিতে চীনা উত্থান মোকাবেলায় বিল পাস মার্কিন সিনেটের

চীনের সঙ্গে প্রযুক্তি সক্ষমতা নিয়ে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে ১৯ হাজার কোটি ডলারের একটি বিল পাস করেছে মার্কিন সিনেট। ইউএস ইনোভেশন অ্যান্ড কম্পিটিশন অ্যাক্ট হিসেবে পরিচিত বিলটি গতকাল ৬৮-৩২ ভোটে পাস হয়েছে। খবর রয়টার্স ও বিবিসি।

মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষে ওই বিলের ওপর ভোটাভুটি হয়েছে। সিনেটে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ থাকলেও বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে উভয় দলের বেশির ভাগ আইনপ্রণেতাই। গতকালের ভোটে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ১০০ সদস্যের সিনেটে বিলের পক্ষে ভোট পড়েছে যেখানে ৬৮টি, সেখানে বিপক্ষে ছিল ৩২টি।

নতুন এ বিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ও গবেষণা জোরদার করার জন্য প্রায় ১৯ হাজার কোটি ডলার রাখা হয়েছে। এছাড়া সেমিকন্ডাক্টর ও টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম উৎপাদন ও গবেষণায় খরচ করতে অতিরিক্ত আরো ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বরাদ্দ দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। বিলটির সমর্থকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি বৃহত্তম শিল্প বিল হতে চলছে এবং গত কয়েক দশকের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এটা সর্বোচ্চ মার্কিন বিনিয়োগ।

তবে চীনের পার্লামেন্টে যুক্তরাষ্ট্রের এ বিলের বিপক্ষে ক্ষোভ ও বিরোধিতা প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে হোয়াইট হাউজে পাঠানোর আগে বিলটিকে এখন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে পাস হতে হবে। দুই কক্ষেই অনুমোদন পাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এতে স্বাক্ষর করলে তা আইনে পরিণত হবে। তবে প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি কবে উঠবে এবং সেখানকার সদস্যরা এ বিলে কোনো পরিবর্তন আনবেন কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়।

ওই বিলে চীনের প্রযুক্তি হুমকি মোকাবেলায় সরকারি ডিভাইসগুলোতে টিকটক অ্যাপ ডাউনলোড নিষিদ্ধ করা, চীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া কোম্পানিগুলোর বানানো ড্রোন না কেনাসহ বেশকিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া যেসব চীনা প্রতিষ্ঠান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলা পরিচালিত হয়েছে বা মেধাস্বত্ব চুরির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হবে।

তাইওয়ানের কোনো কূটনীতিক বা সেনাসদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সফরে গেলে নিজেদের পতাকা প্রদর্শন ও ইউনিফর্ম পরতে পারাসহ বেশকিছু বিষয় ওই বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

চীনবিরোধী এ বিলের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের নেতা চাক শুমার চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ না দিলে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন।

তিনি বলেন, যদি আমরা কিছুই না করি তাহলে প্রভাবশালী পরাশক্তি হিসেবে আমাদের দিন শেষ হয়ে আসতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিলের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা একবিংশ শতাব্দী জয়ের প্রতিযোগিতায় রয়েছি, আমরা পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি নিতে পারি না। বিলটি যু্ক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলা কিংবা মার্কিন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে মেধাস্বত্ব চুরি করা চীনা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর বাধ্যতামূলক বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞার সুযোগ সুষ্টি করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বড় কোম্পানিগুলোও বিলটিকে স্বাগত জানিয়েছে। নতুন এ বিলটি আইনে পরিণত হলে শিগগিরই ৭ থেকে ১০টি সেমিকন্ডাক্টর তৈরির কারখানা হবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রেইমন্ডো।

তবে অনেক সমালোচক এটাকে চীনের ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার মার্কিন প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন। গত কয়েক বছর ধরেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বড় অংকের বিনিয়োগ করছে বেইজিং এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নিজেদের শক্তিশালী বাজার সৃষ্টি করতে পেরেছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *