পরবর্তী মহামারীর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন

চলমান কভিড-১৯ রোগের মহামারী ছিল আধুনিক বিশ্বের মানুষের জন্য অবিশ্বাস্য এক ঘটনা। ২০২০ সালে এসেও যে অতি ক্ষুদ্র এক ভাইরাসের কাছে হার মেনে অফিস-আদালত, কল-কারখানা, স্কুল-কলেজ বন্ধ করে ঘরে বসে থাকতে হবে, সেটা স্বাভাবিকভাবেই কারো মাথায় আসেনি। সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা আসে অর্থনীতির ওপর। কারণ আক্ষরিক অর্থেই দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখতে হয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখার মতো সব কার্যক্রম।

সিএনবিসির খবররে বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে অনেক দেশের সরকারকেই দাঁড়াতে হয়েছে সাধারণ মানুষের পাশে। দিতে হয়েছে জীবন চালানোর জন্য প্রণোদনা, যা একপর্যায়ে সরকারগুলোর জন্যও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে এবার ভবিষ্যৎ মহামারীর জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা ঠিক করছে মার্কিন প্রশাসন। এজন্য ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের একটি পরিকল্পনা পেশ করেছে বাইডেন প্রশাসন। বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতে যে কোনো জৈবিক হুমকি বা মহামারী মোকাবেলায় জাতিকে লড়তে সহায়তা করবে এ বরাদ্দ।

বাইডেন সরকারের বিজ্ঞানবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রেসিডেন্ট এরিক ল্যান্ডার বলেন, পরবর্তী মহামারী সম্ভবত কভিডের চাইতে ভিন্ন রকমের হবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারকেও ভবিষ্যতের যেকোনো ভাইরাসবিষয়ক হুমকির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেজন্যই এ পরিকল্পনা।

২৭ পৃষ্ঠার এ পরিকল্পনার শিরোনাম দেয়া হয়েছে, ‘আমেরিকান প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস: ট্রান্সফর্মিং আওয়ার ক্যাপাবিলিটিজ’। সেখানে আগামী দশকে টিকা ও থেরাপিউটিকস খাতে যথেষ্ট অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ও অবকাঠামো খাতকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এছাড়া সব ধরনের রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে ব্যবহারের মতো উন্নত করে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির পরিকল্পনাও করা হয়েছে।

নতুন এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পাঁচটি স্তম্ভের কথা ভাবা হয়েছে, যার প্রতিটি জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার আলাদা অংশ নিয়ে কাজ করবে। ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসের মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান করোনা মহামারী মার্কিন স্বাস্থ্য খাত ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল সমস্যাগুলো উন্মোচন করেছে। এখনো কভিড সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দেশটির ৩ কোটি ৯০ লাখের বেশি মানুষের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত মারা গেছে ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৭৭৬ জন মানুষ। বহু মানুষের শরীরে এখনো লক্ষ করা যাচ্ছে কভিড-পরবর্তী নানা জটিলতা।

এরিক ল্যান্ডার বলেন, আমাদের সক্ষমতা আরো বাড়ানো দরকার। কারণ ধারণা করা হচ্ছে, পরবর্তী মহামারীটি আরো কঠিন হবে, যা কভিড-১৯-এর চাইতেও ভয়াবহ হয়ে আবির্ভূত হবে। সেজন্য আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি খরচ করা হবে কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকার উন্নয়নের জন্য। এর মাধ্যমে দেশের মানুষকে রোগ, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও মৃত্যুর হাত থেকে দ্রুত রক্ষা করা যাবে। নতুন ধরনের ভাইরাস প্রতিরোধী টিকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তৈরির জন্য ২ হাজার ৪২০ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া থেরাপিউটিকস খাতে খরচ করা হবে ১ হাজার ১৮০ কোটি ডলার। গত বছর মহামারী শুরু হলে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তারা দ্রুত আক্রান্তও হচ্ছিলেন। ভবিষ্যতে যেন এমন পরিস্থিতি না হয় তাই আরো উন্নত পিপিই প্রস্তুতের জন্য বাজেট রাখা হয়েছে ৩১০ কোটি ডলার।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *