পদ্মা সেতু বিশ্বব্যাপী উপলব্ধি তৈরি করেছে যে বাংলাদেশও পারে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে ‘বাংলাদেশ করতে পারে’ এমন ধারণা তৈরি হয়েছে, যা সারা বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বাসস

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর মাধ্যমে বাংলাদেশ যে নিজেরাও পারে সে ধারণা প্রতিষ্ঠিত করে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদাকে উজ্জ্বল করেছে। আর এটা আমরা করতে পেরেছি আত্মবিশ্বাসের জন্য।’

প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ জাতীয় সংসদে পদ্মা সেতু নির্মাণ ও দেশের বৃহৎ এ অবকাঠামোর উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ায় তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে আনিত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি পদ্মাসেতু আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। টেকনোলজি সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের জ্ঞান বেড়েছে। আমরা ভবিষ্যতে আরো অনেক উন্নত কাজ করতে পারবো।

পৃথিবীতে এই ধরনের বিশাল ষ্ট্রাকচারের সেতু আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা। এত রক্ত কোনদিন বৃথা যেতে পারে না।
’৭৫ থেকে ’৯৬ এবং পরবর্তীতে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আমাদের একটা খারাপ সময় গেছে। কিন্তু ধরাবাহিকভাবে ২০০৮ সালের পর থেকে ক্ষমতায় আছি বলেই আজকে উন্নয়নও করতে পারছি এবং পদ্মাসেতুও করতে পেরেছি।

তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শোকরিয়া জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি যখন বলেছি নিজেদের অর্থায়নে করবো (পদ্মা সেতু) মানুষ এগিয়ে এসেছে।

এ সময় অনেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল যার অনেকগুলো চেক তিনি স্মৃতি স্বরূপ তাঁর কাছে সংরক্ষিত রেখেছেন, ভাঙ্গানোর প্রয়োজন পড়েনি বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী সেতুর মূল নকশা থেকে নদীর নাব্যতা এবং নদীর তলদেশের বৈচিত্র, প্রখর স্রোত, পুরো সেতুর নেভিগেশণ ক্লিয়ারেন্স নিশ্চিত করা, রিক্টার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকল্প প্রতিরোধক এবং দ্বিতল এই সেতুর ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি, ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থদের তিনগুণ অর্থ প্রদান এবং বছর বছর নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির বিভিন্ন উদাহারণ টেনে এর ব্যয় নিয়ে ঢালাও ভাবে সমালোচনাকারিদের মনমানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

একে এক ধরনের হীনমন্যতা আখ্যায়িত করে ব্যক্তি স্বার্থে তাদের এধরনের সমালোচনা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পাহাড়ের ওপর ভারতের ভূপেন হাজারিকা সেতুর নির্মাণ ব্যয় নিয়ে সংসদে বিএনপি’র সংসদ সদস্যদের তুলনার উত্তর দেন তিনি।

তিনি বলেন, ড. ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদটি রক্ষার লোভে হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের মাধ্যমে এই পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করায়। তারা ভেবেছিল যে আমরা এখানে সারেন্ডার করবো। কিন্তু আমি শেখ মুজিবের মেয়ে এটা মনে রাখা উচিত। অন্যায়র কাছে মাথা নত করিনি, করবো না। আর এই দেশ এবং দেশের মানুষকে আমি ভালবাসি। কাজেই এদেশের মানুণের মাথা হেঁট হোক সে কাজ কোনদিনও করবো না।

ক্ষমতা তাঁর কাছে বড় বিষয় নয় বরং দেশের মানুষের জন্য কাজ করার একটা সুযোগ বলেও তিনি উল্লেখ করেন এবং ইনশাল্লাহ এদেশের কোন মানুষ আর ভূমিহীন-গৃহহীণ থাকবে না, সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাঁর প্রতি দেশবাসীর যে সমর্থন সেটাকেই তিনি তাঁর মূল শক্তি হিসেবেও অভিহিত করেন।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মুদ্রাস্ফীতি এবং খাদ্য সংকটের প্রসংগ টেনে প্রধানমন্ত্রী সকলকে সাশ্রয়ী এবং মিতব্যয়ী হবারও পরামর্শ দেন। পাশপাশি দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখায় তাঁর আহবান পূণর্ব্যক্ত করেন।

জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী কার্যপ্রনালী বিধির ১৪৭ বিধিতে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

প্রস্তাবে বলা হয়- ‘সংসদের অভিমত এই যে, আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাসে বহু কাঙ্ক্ষিত সর্ববৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প ‘পদ্মা সেতু’ উদ্বোধন করবেন। এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার তিন কোটির অধিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। চার লেনের হাইওয়ে এবং এক লেনের রেললাইন সম্বলিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু আজ পরম বাস্তবতা। বাঙালির অহংকার, আত্মপ্রত্যয়, সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। এই অর্জন ও কৃতিত্বের দাবিদার একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি, বিশ্ব ব্যাংকের ভিত্তিহীন অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনা ছিলেন তার পিতার মতো আপসহীন, অটল ও অবিচল। কোনো চাপের কাছে শেখ হাসিনা সেদিন মাথা নত করেননি।’

প্রস্তাবে বলা হয়, ‘পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। পদ্মা সেতুর সড়ক ও রেল সংযোগের কারণে প্রথমবারের মতো সমগ্র দেশ একটি সমন্বিত যোগাযোগ কাঠামোর আওতায় চলে আসবে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় সামগ্রিকভাবে দেশের জিডিপি বাড়বে প্রতি বছর অন্তত ১ দশমিক ২৩ শতাংশ।’

প্রস্তাবে আরো বলা হয়, ‘জাতির পিতা শেখ মুজিব বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্য অর্জনে সংগ্রাম করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পদ্মাসেতু নির্মাণ সেই অর্থনৈতিক মুক্তির এক অনন্য সোপান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার সাহসী ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব, মানুষের প্রতি অপার ভালোবাসা এবং জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দেওয়ার জন্য জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হোক।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *