নরসিংদীর উৎকৃষ্ট সবজি যাচ্ছে বিদেশে

নরসিংদীতে উৎপাদিত উৎকৃষ্ট মানের সবজি যাচ্ছে বিদেশে। চলতি মৌসুমে সবজির মধ্যে জেলায় শিমের উৎপাদনই বেশি। বর্তমানে শিমই রফতানি হচ্ছে বেশি।

পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সবজির মধ্যে শিমই প্রধান। শিমের মধ্যে ‘নলডগ’ ও ‘চিটাগাইংগা’ শিমের চাহিদাই বেশি। বিভিন্ন জাতের শিম থাকলেও এই দুই জাতের শিমের কদর বেশি। আশনি, টইঙ্গা এবং বিচিযুক্ত প্রভৃতি শিমের আমদানি থাকলেও রফতানি জন্য পাইকারেরা ‘নলডগ’ এবং ‘চিটাগাইংগা’ (স্থানীয় নাম) শিমই কিনছেন বেশি।

নরসিংদীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশের বাইরে রফতানি জন্য পাইকাররা ‘নলডগ’ শিম ক্রয় করছেন। অপরদিকে দেশের অভ্যন্তরে বিশেষ করে ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, কুমিল্লা, রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরবরাহের জন্য ক্রয় করছেন অন্যান্য জাতের শিম। এসব শিমের মধ্যে দাম বেশি ‘চিটাগাইংগা’ এবং ‘নলডগ’ শিমের।
সমুদ্রসৈকতে ‘শারীরিক সম্পর্ক’, যুগলকে আটক-জরিমানা ≣ ময়মনসিংহে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মতবিনিময় সভা ≣ [১] ফরিদপুরে ১০৮ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক-২

পাইকাররা জানান, চিটাগাইংগা শিম সবজি হিসেবে বেশি সুস্বাদু। বাজারের চাহিদা বেশি। এজন্য এর দামও বেশি। নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার চাঁদপাশা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি ৩৮ টাকা দরে ‘চিটাগাইংগা’ শিম ক্রয় করছেন পাইকাররা। বাজারে ৩৮ টাকা কেজিই হলো সর্বোচ্চ দাম। অন্যসব জাতের শিম বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০ থেকে ২৪ টাকা কেজি দরে।

যোশর বাজার এবং দুপুর বেলায় বারৈচা বাজারে দেখা যায়, সেখানকার অবস্থা কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন। মরজালে ‘নলডগ’ এবং ‘চিটাগাইংগা’ শিমের কোনো আমদানি নেই। সেখানকার বাজারে উঠেছে আশনি, টইঙ্গা এবং সাদা ফুটকা শিম। এগুলোর দাম প্রায় একই। ২৪ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

পাইকাররা জানান, যোশর বাজার থেকে ক্রয় করা শিমের অধিকাংশই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর এবং কুমিল্লায় সরবরাহ করবেন। অবশিষ্ট সরবরাহ করবেন নরসিংদী শহরে এবং ঢাকায়।

যোশর বাজারের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে বয়ে গেছে আড়িয়াল খাঁ নদ। এ নদের পূর্বপাশের এলাকায় এক গ্রামের নাম ফুলদী। ফুলদী গ্রামের কৃষক মিজান খান জানান, তিনি ৯০ কেজি টইঙ্গা শিম নিয়ে আসছেন বাজারে এবং বিক্রি করেছেন ২৫ টাকা কেজি দরে। একই গ্রামের কৃষক ফজলুল হক প্রায় ২ মণ আশনি শিম বিক্রি করেছেন ২৪ টাকা কেজি দরে।

বারৈচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, যোশর বাজারের মতো অনুরূপ শিম উঠেছে এবং দর প্রায় একই। সেখানেই নলডগ ও চিটাগাইংগা শিম খুব একটা আমদানি নেই। সেখানে উঠেছে টইঙ্গা, আশনি এবং অন্যান্য বিচিযুক্ত শিম।

বারৈচা বাজারের পাশেই কৃষক আবুল কালামের কৃষি জমি। তিনি জানান, বাজারে সবজির আমদানি বেশি হলে দাম কম থাকে। আর যদি আমদানি কম থাকে তাহলে দাম বেশি থাকে। অপরদিকে পাইকারেরা জানান, তারা বাজার থেকে ২৫ টাকায় কিনে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন ৩০ টাকায়।

শিবপুর পালপাড়া বাজারে দেখা যায়, সেখানে আমদানি বেশি ‘নলডগ’ শিমের। পাইকাররা ক্রয় করছেন প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। ঢাকার বাজারে নিয়ে এগুলো বিক্রি করেন ২৪ টাকা কেজিতে।

পালপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী মানিক চাঁন জানান, তারা ১২ জন এক সঙ্গে পার্টনার হিসেবে সবজির ব্যবসা করেন। চলতি মৌসুমে তারা ‘নলডগ’ শিমই ক্রয় করছেন বেশি। নলডগ শিমের মধ্যে যেগুলো বেশি ভালো সেগুলো বাছাই করে বিদেশে রফতানি করেন ৩০ টাকা দরে।

তারা জানান, বিদেশ বলতে সৌদিআরব, দুবাই, কাতার, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, মালয়েশিয়া এবং লন্ডনে রফতানি করা হয়। বিদেশ পাঠানোর জন্য তারা ১০ কেজি করে ছোট ছোট কার্টুনের প্যাকেট করে থাকেন। এই প্যাকেটগুলো ট্রাকে করে সরাসরি ঢাকা বিমানবন্দরে তারা পৌঁছে দেন। সেখান থেকে বিমানে সরাসরি বিদেশে প্রেরণ করেন অন্য ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী জেলায় চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৪৯১ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ হয়েছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ১৭৮ মেট্রিক টন।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-মহাপরিচালক শোভন কুমার ধর জানান, ২০২০ সালে ৫ হাজার ৭০ টন সবজি ও ফল বিদেশে রফতানি করা হয়েছে। ফলের মধ্যে কাঁঠাল, তাল ও লটকন রয়েছে। রফতানিকৃত সবজির মধ্যে শিম ২৫০ টন, চিচিংগা ১২০ টন, ধুন্দল ৮০ টন, ঝিঙ্গা ৫০ টন, কাকরোল ২৫০ টন, পেস্তা আলু ১০ টন, বেগুন ১৫০ টন ও লেবু ২৫০ টন

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *