নতুন নিষেধাজ্ঞার খবরে ফের বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম

আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। ইউক্রেনে হামলা চালানোয় রাশিয়াকে চাপের মুখে ফেলতে নতুন নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ খবর প্রকাশের পর পরই জ্বালানি তেলের সরবরাহ নতুন করে ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ইরানের পরমাণু সংলাপ স্থবির হয়ে পড়ায় এ শঙ্কা আরো ঘনীভূত হচ্ছে। এসব কারণেই বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে।

তথ্য বলছে, আইসিই ফিউচারস ইউরোপে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য একদিনের ব্যবধানে ১ ডলার ২০ সেন্ট বা ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ১০৮ ডলার ৭৩ সেন্টে।

অন্যদিকে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য ১ ডলার ২৫ সেন্ট বা ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ১০৪ ডলার ৫৩ সেন্টে।

এর আগে এশিয়ার বাজারে উভয় বাজার আদর্শের চুক্তিমূল্য ব্যারেলে ২ ডলারের বেশি কমে গিয়েছিল। মূলত মজুদ থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহের ঘোষণায় দরপতন ঘটে। তথ্য বলছে, সম্প্রতি জাপানের শিল্পমন্ত্রী কোইচি হাগিউদা জানান, ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) দ্বিতীয় ধাপে সদস্য দেশগুলোর মজুদ থেকে বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।

কিন্তু এর মধ্যেই রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি এসেছে। মূলত ইউক্রেনে বেসামরিক লোকজনকে হত্যার অভিযোগে রাশিয়ার ওপর নতুন ধাপে নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা করছে পশ্চিমা দেশগুলো। নিষেধাজ্ঞার হুমকির পর গত সোমবারই আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৩ শতাংশ বেড়ে যায়। ভিয়েনা সংলাপ স্থগিত হয়ে যাওয়াও এতে ভূমিকা রাখে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আগামী দিনগুলোয় আরো বাড়বে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলো মজুদ থেকে বাজারে সরবরাহের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের যে চেষ্টা চালাচ্ছেন তা ব্যর্থ হবে।

তথ্য বলছে, ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) ৩১ সদস্য দেশ মার্চের শুরুতে জরুরি মজুদ থেকে সব মিলিয়ে ৬ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বাজারে সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছিল।

এ পদক্ষেপের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল জ্বালানি বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।

আইইএর মন্ত্রীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে তা বৈশ্বিক জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি বয়ে আনবে। তবে দেশগুলোর প্রতিনিধিরা রাশিয়ার ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রতিও সমর্থন জানান।

কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির আপত্কালীন মজুদ থেকে ৬ কোটি ১৭ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল সরবরাহের সিদ্ধান্ত বাজারে স্থিতি ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছে অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ এবং এর মিত্র দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস।

এর আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিশ্ব অর্থনীতি বড় রকমের ধাক্কা খাবে বলে সতর্ক করেছিল ওপেক প্লাস। এক প্রতিবেদনে জোটটি জানায়, শুধু ইউরোপেই নয়, বরং সারা বিশ্বের জ্বালানি তেলের ব্যবহারকারী ও বাণিজ্যিক মনোভাব হ্রাস পেতে পারে। যুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

এদিকে জ্বালানি বাজারে চলমান অস্থিতিশীলতা নিরসনে নতুন করে কৌশলগত মজুদ থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, ১৮ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে। এটিই হতে যাচ্ছে ৫০ বছরের ইতিহাসে কৌশলগত মজুদ থেকে সর্বাধিক সরবরাহ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *