দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন জামাল

২০০৩ সালের আরো একটি ট্রফি জেতার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। ত্রিদেশীয় সিরিজে আয়োজক দেশের সঙ্গে হেরে ১৮ বছরের শিরোপা খরা মেটানোর অপেক্ষাটা বাড়লো এক ধাপ। তীরে এসে তরী ডোবায় দেশের ফুটবল সমর্থকদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে আরেকবার। ট্রফি হারানোর বেদনা ছুঁয়ে গেছে জাতীয় ফুটবলারদেরও। জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার কণ্ঠেও যেন সেই হতাশার প্রতিচ্ছবি। দেশবাসীর কাছে তিনি ক্ষমা চাইলেন হাতজোড় করে। জামাল ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি সরি বলবো। আমরা জিততে পারিনি।
অধিনায়ক হিসেবে আমি অনেক হতাশা বোধ করছি। অবশ্যই পুরো বাংলাদেশই হতাশ। আমি সবার কাছে ক্ষমা চাইছি।’ জামালের ভুলের পাশাপাশি জেমি ডে’র অতি পরীক্ষা-নিরীক্ষাকেও দায়ী করছেন অনেকে। ফাইনালেও আগের ম্যাচ দু’টির মতো মূল একাদশেই চমক রাখেন জেমি ডে। টুর্নামেন্টে অভিষেক করা দুই নবাগত ডিফেন্ডার রিমন হোসেন ও মেহেদী হাসানকে মূল একাদশে সুযোগ করে দেন জাতীয় দলের এই প্রধান কোচ। শুরুর একাদশে সুযোগ হয়নি মাসুক মিয়া জনি, টুটুল হোসেন বাদশা, ইয়াসিন আরাফাত ও মাহবুবুর রহমান সুফিলদের। ফরোয়ার্ড লাইন আপ শক্তিশালী করতে মাঠে নামানো হয় পাঁচ আক্রমণভাগের ফুটবলার। ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দীন খেলেন ডিফেন্ডার হিসেবে। ভুল একাদশ নিয়ে মাঠে নামা বাংলাদেশ ফাইনালে হোঁচট খাওয়ায় ম্যাচের প্রথমার্ধে। শুরুর ৪২ মিনিটে ২ গোল হজম করে কার্যত ম্যাচ থেকেই ছিটকে যায় জেমি ডে’র শিষ্যরা। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অধিনায়ক জামাল বলেন, ‘আসলে আমাদের বড় মঞ্চে বা বড় ম্যাচ পেলে পারফর্ম করা উচিত। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি। অনেক খেলোয়াড় লুকিয়ে ছিল। বড় ম্যাচে লুকিয়ে থাকার সুযোগ নেই।’ ফাইনালে ফুটবলারদের নার্ভাসনেসই মূলত এমন হতাশার কারণ বলে মন্তব্য করেন জামাল। বলেন, ‘ফার্স্ট হাফ ভালো যায়নি কারণ অনেক প্লেয়ার নার্ভাস ছিল। নতুন টিম। অনেক নতুন প্লেয়ার আসছে। আমি নিজেও বলেছি নার্ভাস থাকা যাবে না। ইজি খেলতে হবে। নার্ভাসনেস থাকলে খেলায় পারফর্ম করা কঠিন। ‘অনেক খারাপ লাগতেছে। গ্রেট অপরচুনিটি, গ্রেট স্টেজ, অনেক ফ্যান্স।’ ২২ বছর আগে সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে আলফাজের একমাত্র গোলে বালগোপাল মহারজনদের হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার কোচ হয়ে সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নিলেন মহারজন। আগের দু’ম্যাচে এক গোলও
করতে পারেনি নেপাল। অথচ ফাইনালে ৪২ মিনিটের মধ্যে দুই গোল পেলো স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের দুর্বল ডিফেন্ডারদের কারণেই এই ধস নেমেছিল। ফাইনালে জেমির একাদশ নিয়ে ম্যাচ শেষে বিস্ময় প্রকাশ করেন নেপালের কোচ বালগোপাল। এ বিষয়ে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ম্যাচ শুরুর এক ঘণ্টা আগে একাদশে যখন দেখলাম জেমির একাদশে ছয়জন ফরোয়ার্ড, মাত্র দুইজন ডিফেন্সে- তখন খুবই অবাক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তারা শুরু থেকেই হয়তো খুব আক্রমণাত্মক হবে। কিন্তু দেখলাম না, তেমন কিছুই হলো না।’ বাংলাদেশের কোচ জেমি ডে মিডফিল্ডার সাদ উদ্দিনকে ফুল ব্যাক পজিশনে খেলিয়েছেন। এ রকম আরও অনেক পজিশনে তিনি পরিবর্তন করেছেন। ফাইনালে কোচের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যই রানার্স আপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে, এমনটা বলছেন অনেকে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের খেলা নিয়ে প্রসংশা করেন মহারজন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ গোছালো ছিল। তারা দ্বিতীয়ার্ধে ভালোই খেলেছে।’ বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাঁচটি বদল আনেন কোচ। এতেই ৮৩ মিনিটে ব্যবধান কমান বদলি মাহবুবুর রহমান সুফিল, জামাল ভূঁইয়ার কর্নার থেকে হেডে গোল করে। এরপর কিছুক্ষণ নেপালকে চাপে রাখা গিয়েছিল, এই যা। লাভ হয়নি কিছুই।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *