গ্লোবাল ডেইরি ট্রেডের (জিডিটি) সর্বশেষ নিলামে দুগ্ধপণ্যের দাম সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিসরে কমেছে। কারণ রেকর্ড সর্বোচ্চ দামের জন্য ক্রেতাদের মাঝে অনীহা দেখা দেয়।
সর্বশেষ নিলামে গ্লোবাল ডেইরি ট্রেডের মূল্যসূচক আগের নিলামের তুলনায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। সূচক দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৭৯ পয়েন্টে। ২০১৫ সালের ৪ আগস্টের পর এটিই সবচেয়ে বড় দরপতন। ওই সময় মূল্যসূচক ৯ দশমিক ৩ শতাংশ কমে গিয়েছিল।
তথ্য বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দুগ্ধপণ্যের তীব্র সংকট চলছে। ফলে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও তা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে আমদানিকারক দেশগুলো। এ কারণে চলতি বছরের শুরু থেকে মার্চের প্রথম নিলাম পর্যন্ত অব্যাহতভাবে বেড়েছে দুগ্ধপণ্যের দাম। এটি মূল্যসূচককে রেকর্ড পর্যায়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। তবে মার্চের দ্বিতীয় নিলাম থেকে দাম কমতে শুরু করে। তবে দাম কমার গতি ছিল শ্লথ। সর্বশেষ নিলামে রেকর্ড গতিতে দাম কমেছে।
চীনে কভিড-১৯ জনিত লকডাউনের প্রভাবে সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সাম্প্রতিক নিলামগুলোয় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সর্বশেষ নিলামের ফলাফল রেকর্ড দামের কারণে ক্রেতাদের অনীহার প্রতিই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এনজেডএক্সের ঊর্ধ্বতন বিশ্লেষক অ্যামি ক্যাসেলটন বলেন, নিলামের এ ফলাফল দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। দুগ্ধপণ্যের দাম কমার আশঙ্কা থাকলেও তা এমন বড় পরিসরে কমবে তা প্রত্যাশা করেননি কেউই।
জিডিটি মূল্যসূচকের তথ্য বলছে, সর্বশেষ নিলামে সর্বোচ্চ ২৭ হাজার ১৩০ টন দুগ্ধপণ্য সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার ১৬৩ টন। নিলামে ১৩২ জন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এতে জয়ী হন ১০৭ জন। নিলামে প্রতি টন দুগ্ধপণ্যের গড় দাম উঠেছে ৪ হাজার ৪১৯ ডলার পর্যন্ত, যা আগের নিলামের তুলনায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ কম।
প্রতি নিলামে যে পরিমাণ দুগ্ধপণ্য উত্তোলন করা হয় তার মধ্যে অর্ধেকের বেশি ননীযুক্ত গুঁড়ো দুধ। পণ্যটির গড় দাম ৬ দশমিক ৫ শতাংশ কমে চার মাসের সর্বনিম্নে নেমেছে। প্রতি টনের মূল্য স্থির হয়েছে ৩ হাজার ৯১৬ ডলারে। পণ্যটির ক্ষেত্রে গত বছরের মার্চের পর এটিই সবচেয়ে বড় দরপতন।
ক্যাসেলটন বলেন, দাম কমে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে উত্তর এশিয়ার বাইরের শীর্ষ ভোক্তা দেশগুলো। লম্বা সময় ধরে চড়া দামে দুগ্ধপণ্য কিনলেও বর্তমান পরিস্থিতি বলছে এসব দেশ বাড়তি মূল্য পরিশোধ করা থেকে বিরত থাকতে পারে।
এদিকে ননিবিহীন গুঁড়ো দুধের দামও ৬ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৪ হাজার ১৩০ ডলারে নেমেছে। অ্যানহাইড্রাস মিল্ক ফ্যাটের দাম ১২ দশমিক ১ শতাংশ কমে ৬ হাজার ৮ ডলারে লেনদেন হয়েছে। মাখনের দাম ১২ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। প্রতি টন বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৮০৭ ডলারে। চেডার পনিরের দাম ৮ দশমিক ৬ শতাংশ কমে টনপ্রতি ৫ হাজার ৬৫২ ডলারে নেমেছে। মাখনযুক্ত গুঁড়ো দুধের দাম গত বছরের নভেম্বরের পর প্রথমবারের মতো কমল। প্রতি টন বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ২০৩ ডলারে, যা আগের নিলামের তুলনায় ৬ দশমিক ১ শতাংশ কম।