দফায় দফায় রকেট হামলায় কেঁপে উঠল কাবুল

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে দফায় দফায় রকেট হামলার ঘটনায় কমপক্ষে আট বেসামরিক ব্যক্তি নিহত ও অন্তত ৩১ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে কাবুলের সুরক্ষিত গ্রিন জোনে ওই হামলা চালানো হয়। এ সময় অন্তত ২৩টি রকেট নিক্ষেপ করা হয় বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। খবর আল জাজিরা।

কাবুলের ওই গ্রিন জোনে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অবস্থিত। ডজনখানেক আন্তর্জাতিক কোম্পানি ও তাদের কর্মীদের বসবাস ওই অঞ্চলে। তাই এলাকাটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ কড়া রাখা হয়। তার পরও গত কয়েক মাসে গ্রিন জোন ও এর আশপাশে কয়েক দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে।

আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তারিক আরিয়ান জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা এসব হামলা চালিয়েছে। একটি ছোট ট্রাক থেকে এসব রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। কীভাবে ট্রাকটি শহরে প্রবেশ করল, তা এখনো জানা যায়নি। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তারিক আরিয়ান আরো জানান, রকেট হামলায় আট বেসামরিক ব্যক্তি নিহত ও অন্তত ৩১ জন আহত হয়েছেন। কাবুল পুলিশের মুখপাত্র ফেরদৌস ফারামারজও হতাহতের সংখ্যা একই বলে নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা হামলার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবিতে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি ও ভবনে বড় গর্ত দেখা গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। তালেবানের পক্ষ থেকেও এ হামলায় সংশ্লিষ্টতা নাকচ করে দেয়া হয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জনসমাগম হয় এমন স্থানে তারা অন্ধভাবে হামলা চালায় না।

তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের মুজাহিদিনদের কাবুলে এ রকেট হামলার ঘটনার সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’

শিগগিরই উপসাগরীয় দেশ কাতারে তালেবান প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আফগান সরকারের প্রতিনিধি ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগেই দেশটিতে এ রকেট হামলার ঘটনা ঘটল।

আফগানিস্তানে গত কয়েক মাস ধরেই এমন সহিংসতার খবর সামনে আসছে। গত সপ্তাহেও গ্রিন জোনে চার দফা রকেট হামলা চালানো হয়। মঙ্গলবার ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার ১ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যেই অত্যন্ত সুরক্ষিত অঞ্চলটিতে কয়েক দফা রকেট হামলা চালানো হয়।

আফগান সরকার ও তালেবানদের মধ্যে শান্তি আলোচনা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর থেকেই দেশটিতে হামলার ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে রাজধানী কাবুলে এর প্রকটতা অনেক বেশি। এসব হামলার কিছু ঘটিয়েছে তালেবানরা। কিছু হামলার জন্য অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী দায়ী।

তারিক আরিয়ান জানান, গত ছয় মাসে তালেবান ৫৩টি আত্মঘাতী হামলা ও ১ হাজার ২৫০টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে ১ হাজার ২১০ বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হামলা চালায় একদল বন্দুকধারী। হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত হন। এর মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন শিক্ষার্থী। ওই হামলায় আরো অর্ধশতাধিক আহত হন। ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ওই হামলার দায় স্বীকার করে নেয়া হলেও আফগান কর্মকর্তাদের দাবি, তালেবানের চরম উগ্র হাক্কানি নেটওয়ার্ক এর সঙ্গে জড়িত।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *