দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সিঙ্গাপুর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। খবর রয়টার্স।

মুনাফা ও প্রবৃদ্ধির জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকলেও এখন সেখানে অশনিসংকেত দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। অনেক সাহসী বিনিয়োগকারীও কয়েকবার ভেবে দেখছেন সেখানে বিনিয়োগে এগোবেন কিনা। প্রিন্সিপাল গ্লোবাল অ্যাসেট অ্যালোকেশনের এশিয়াবিষয়ক প্রধান বিনয় চান্দগোথিয়া বলেন, আসিয়ান একসময় বিনিয়োগকারীদের প্রিয়পাত্র ছিল। কিন্তু পর্যটন খাত সবচেয়ে হুমকিতে থাকায় অঞ্চলটির প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে বড় চাকাটি দুর্বল হয়ে আছে। এতে বিনিয়োগপ্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। চলতি বছরেই অঞ্চলটি থেকে অন্তত ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

চান্দগোথিয়া আরো বলেন, আগামী দিনগুলোয় পরিস্থিতি আরো ভালো হবে—এ প্রত্যাশায় এখন যদি অর্থ না ঢালে, তাতে তারা বড় কিছু মিস করছেন বলে মনে করছেন না বিনিয়োগকারীরা।

গত কয়েক মাসে নতুন বিনিয়োগে না গিয়েও তারা তেমন কিছু হারিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে না। চলতি বছরে সিঙ্গাপুর, জাকার্তা, ম্যানিলা ও ব্যাংককের শেয়ারবাজারে ২০ শতাংশ পতন হয়েছে। ডলারের বিপরীতে তাদের দেশীয় মুদ্রার মানেও বড় আকারের অবনয়ন হয়েছে। এতে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অর্থনীতিগুলোর কাছাকাছিই অবস্থান করছে একসময়ের প্রবৃদ্ধির এ ঘোড়া।

ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে কভিড-১৯-এর কারণে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ মহামারীতে অর্থনৈতিকভাবে বড় ধাক্কা খেয়েছে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড।

বিশ্লেষকরা অঞ্চলটির অর্থনৈতিক পূর্বাভাস কমিয়ে দিচ্ছেন। চলতি বছরে এ অঞ্চলের কোম্পানি আয় ৩০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি কমতে পারে। যেখানে পুরো এশিয়ার কোম্পানি আয়ে পতনের পূর্বাভাস ৪ দশমিক ২ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের জন্য এ পূর্বাভাস যথাক্রমে ২২ ও ৪০ শতাংশ।

জাকার্তায় ফের শারীরিক দূরত্ব নীতিমালা কঠোর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্দোনেশিয়ার শেয়ারবাজারে নতুন করে পতন দেখা দিয়েছে। এতে অঞ্চলটির অর্থনৈতিক আরোগ্যলাভের সম্ভাবনায় পেরেক ঠুকে দিয়েছে।

এশিয়া ফর জার্মান অ্যাসেট ম্যানেজার ডিডব্লিউএসের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা শন টেইলর বলেন, যখন লকডাউন অব্যাহত থাকছে তখন সেখানে অতিরিক্ত বিনিয়োগের কোনো অর্থ নেই। কারণ আমরা জানি না সামনের দিনগুলোয় কী অপেক্ষা করছে।

তিনি আরো বলেন, চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা মনে করছি চীন ও উত্তর এশিয়ায় ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।

ভ্যাকসিন কাদের ওপর প্রথম প্রয়োগ করা হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং প্রযুক্তি খাতের শেয়ারের প্রতি অতি উন্মাদনার কারণে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ এখন অন্য গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে।

এএমপি ক্যাপিটালের হেড অব ডাইনামিক মার্কেটস নাদের নাইমি মনে করেন, কার্যকর টিকা আসার আগ পর্যন্ত এ অঞ্চলটিতে বড় আকারের মূলধন প্রবাহ হবে না।

তবে এটাও সত্য, অঞ্চলটিতে বিনিয়োগ একেবারেই অনুপস্থিত নয়। অ্যাভাইভা ইনভেস্টরসের সিঙ্গাপুরভিত্তিক পোর্টফোলিও ম্যানেজার উইল ম্যালকম বলেন, আমরা ইন্দোনেশিয়ায় বেশি বিনিয়োগ করেছি। ভোক্তাব্যয় চাঙ্গার অংশ হিসেবে ব্যাংক রাকিয়াত ও সম্প্রচারমাধ্যম সুরিয়া চিত্রা মিডিয়ায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার ক্রয় করেছি।

বিনিয়োগকারীরা যে কিছুটা ভয় পাচ্ছেন, এ বিষয়টিও তুলে আনছেন অনেকে। সিটি প্রাইভেট ব্যাংকের হেড অব এশিয়া ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজি কেন পেং বলেন, আমরা আমাদের গ্রাহকদের বলার চেষ্টা করছি যে আগামী ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে কৌশলগত শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখাবে। কিন্তু বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের দিক বিবেচনায় আমরা তাদের আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি না।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *