তালেবানের হাতিয়ার হতে পারে মার্কিন ডাটাবেজ

আফগানিস্তানের জনগণের বিষয়ে তথ্যভাণ্ডার বা ডাটাবেজ তৈরি করতে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা শত শত মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। সে সময় বলা হয়েছিল, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির আধুনিকায়ন, সরকারের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু তালেবানের হাতে ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর সেসব গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল সম্পদ শেষ পর্যন্ত তাদের হাতে চলে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে নাগরিকদের চিহ্নিত করার জন্য বায়োমেট্রিক নমুনাও। খবর এপি।

মার্কিন বাহিনী কর্তৃক প্রস্তুতকৃত তথ্য ভাণ্ডার আফগান নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু এখন তালেবানরা দেশের সব নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে, সেহেতু এসব তথ্য সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ও শাস্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত হতে পারে। তবে এসব তথ্য গঠনমূলকভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। যেমন শিক্ষার প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, স্থিতিশীল গণতন্ত্রের প্রবর্তনসহ নানা কাজে এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। সার্ভিল্যান্স প্রযুক্তি বিশারদ ফ্র্যাঙ্ক প্যাসকেল বলেন, বিষয়টি খুবই বিড়ম্বনামূলক হয়েছে। ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে সংগ্রহ করা তথ্য আদলে দেশটির মানুষকে নরকের পথে নিয়ে যাচ্ছে।

গত ১৫ আগস্টের পর থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে, সরকারি বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করে সেসব আফগান নাগরিকদের চিহ্নিত করা হচ্ছে যারা মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে কাজ করতেন। তাদের অনেকেই হুমকিমূলক ফোন কল, মেসেজ ও হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজে যুক্ত এক আফগান নাগরিক সংবাদমাধ্যম এপিকে জানিয়েছেন, তিনি ও তার সহকর্মীকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে। তারা এখন আত্মগোপনে আছেন। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিদিনই অবস্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে।

যদিও ক্ষমতা গ্রহণের পর তালেবান নেতারা বলেছিলেন যে তারা প্রতিশোধ নিতে আগ্রহী নন। তাদের লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক সহযোগিতাগুলো পুনরুদ্ধার করা ও বিদেশী মালিকানাধীন সম্পদগুলোর বন্দোবস্ত করা। তবে তাদের কঠোর বিধিনিষেধ জারির নমুনা এরই মধ্যে দেখা দিতে শুরু করেছে। বিশেষ করে নারীদের বিষয়ে।

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার গবেষক আলি কারিমি বলেন, আফগানিস্তানের নাগরিকরা এখনো তালেবানদের বিশ্বাস করতে রাজি না। তিনি আশঙ্কা করছেন, এসব তথ্য মৌলবাদী তালেবানদের কঠোর ধর্মরাষ্ট্র গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে স্পর্শকাতর তথ্যভাণ্ডার হিসেবে দেখা হচ্ছে আফগানিস্তানের এ ডাটাবেজকে। কিন্তু এর ভাগ্যে কী আছে সেটি এখনো অজানা। তালেবানরা এ তথ্যভাণ্ডার কীভাবে ব্যবহার করবে তার দিকে এখন তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। আফগানিস্তানের উন্নয়ন সহযোগীদের প্রত্যাশা যে এসব তথ্য দেশটির উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি আসলেই ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *