ডিজিটাল হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিক ব্যবস্থাপনা

বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিকদের শোভন কর্মক্ষেত্র ও সম্মানজনক পারিশ্রমিক নিশ্চিতে একসঙ্গে কাজ করবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।

গতকাল ঢাকার একটি হোটেলে এ-সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে। প্রবাসীকল্যাণ সচিব মুনিরুস সালেহীন ও বাংলাদেশে আইএলওর আবাসিক পরিচালক টুমো পৌটিআইনেন নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

এ চুক্তির আওতায় প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার সনদ ও স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে আইএলও কারিগরি সহায়তা দেবে। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী শ্রম রফতানিতে সম্ভাব্য বাজার পর্যালোচনা ও অনলাইনে দক্ষতার স্বীকৃতির সনদ দেয়া, বিশেষ করে স্কিলস পাসপোর্ট প্রবর্তনের মতো উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। এ উদ্যোগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর্থিক সহায়তা দিয়ে পাশে থাকছে।

চুক্তিসই অনুষ্ঠানে আইএলওর সহযোগিতায় তৈরি তিনটি অনলাইন তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উদ্বোধন করেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ। এগুলো ব্যবহার করে মন্ত্রণালয় ও জনশক্তি রফতানি ব্যুরো প্রবাসী শ্রমিকদের অভিযোগ পর্যালোচনা, শ্রমবিষয়ক কূটনীতিকদের প্রতিবেদন ও রিক্রুটিং এজেন্সির কার্যক্রম তদারকির মতো কার্যক্রম চালাতে পারবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি সনদায়ন এবং সুনির্দিষ্ট চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে পাঠানোই এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য।

অনলাইনে নতুন তিনটি পদ্ধতির তাত্পর্য তুলে ধরে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এ ধরনের টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে সক্ষমতা বাড়বে এবং প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে।

প্রবাসী শ্রমিকদের দক্ষতা প্রশিক্ষণ, সনদ ও স্বীকৃতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশে আইএলওর আবাসিক পরিচালক টুমো পৌটিআইনেন বলেন, দক্ষতার স্বীকৃতি না থাকলে শুধু যে ন্যায্য মজুরি পেতে সমস্যা হয় তা নয়, নিজের দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে প্রবাসী শ্রমিকদের সংহত করার ক্ষেত্রেও জটিলতা সৃষ্টি করে।

অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকরা যেসব দেশে কাজ করেন, সেখানকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তার মূল্যায়ন নেই। নানা কারণে তারা শোভন ও সম্মানজনক কাজ বা পারিশ্রমিকও পান না। এর মধ্যে চলমান কভিড-১৯ মহামারী বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের দুর্দশা বাড়িয়ে তুলেছে। চাকরি হারিয়ে বহু শ্রমিক দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। অসংখ্য শ্রমিকের বিদেশযাত্রাও অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

অনুষ্ঠানে নতুন যে তিনটি অনলাইন তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উদ্বোধন করা হয়, সেগুলো প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে সুইস ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন। এ ধরনের পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রম অভিবাসনসংক্রান্ত কার্যক্রমের তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের প্রাথমিক যাত্রা হলো বলেও অনুষ্ঠানে মন্তব্য করা হয়।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইএলওর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ছাড়াও উন্নয়ন সহযোগী ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *