ধনী দেশগুলো তাদের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি টিকা মজুদ করেছে। টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে দেশগুলো শুধুই শর্ত দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকেও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কবে নাগাদ পাঠাবে তা এখনো নিশ্চিত করেনি। দেশগুলো টিকা দেয়ার আশ্বাসের মাধ্যমে শুধুই কালক্ষেপণ করছে।
যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে গতকাল দুপুরে নিজ দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
করোনার টিকা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি যে টিকা নিয়ে কোনো বৈষম্য হওয়া উচিত নয়। কিন্তু ধনী দেশগুলো সব টিকা নিয়ে বসে রয়েছে, তাদের জনগণের থেকেও বেশি। অনেকগুলো দেশের টিকার মেয়াদ চলে যাচ্ছে। তারা মুখে বলে আমাদের দেবে। কিন্তু কেউ দেয় না। আবার দেয়ার আগে জিজ্ঞেস করে, আমাদের ভোট দেবেন কিনা। টিকা শোষণ করার আরেকটি যন্ত্র হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে। টিকার বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবকে বলেছি আরো শক্ত হতে। এটি সবার অধিকার।
চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কখন পাব, কতটুকু পাব এটি এখনো আমরা কনফার্ম হতে পারিনি। টিকা নিয়ে বড় পণ্ডিতরা, যেমন জি৭ তো ১০০ কোটি টিকা দেয়ার কথা বলেছে। ওই গল্পই শুনছি। কিন্তু দেয়ার নামে তো কেউ আগ্রহী না। খালি মুলা দেখাচ্ছে সবাই।
বিদেশগামী কর্মীদের টিকা প্রাপ্তি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করেছিলেন। আমরা তখন প্রস্তাব দিয়েছি যে দেশে করোনার পরীক্ষা করিয়ে শ্রমিকদের সৌদিতে কোয়ারেন্টিন না করিয়ে বাংলাদেশে সাতদিন কোয়ারেন্টিন করার বিষয়টি। সৌদিতে কোয়ারেন্টিন বিষয়টি তুলে দিতে বলেছি। সেই সঙ্গে শ্রমিকদের ডাবল ডোজ টিকা দিয়ে পাঠাব। জনসনের টিকা একটি ডোজ হলেই হয়। মুখ্য সচিবকে অনুরোধ করেছি জনসনের টিকা প্রবাসীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রখাতে। তাদের এ টিকা দেয়া গেলে বিদেশে কোয়ারেন্টিন করতে হবে না। এতে শ্রমিকদের হয়রানি কমবে। এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করি, এর ইতিবাচক ফল আসবে।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা শুনছি জাপানের জনসংখ্যা ১২ কোটি। তাদের টিকা রয়েছে ৪৪ কোটি। এর মধ্যে তাদের ৩ কোটি অক্সফোর্ডের টিকা রয়েছে। আমরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু টিকা সমস্যার সমাধান তখনই হবে, যখন আমরা তৈরি করব। নিজেরা তৈরি করলে অন্যদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না।
রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে টিকা চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা টিকা চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত ধাপে রয়েছি। যেকোনো দিন হবে। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানে।
সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে ভোট না দেয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বন্ধু দেশগুলো যারা মানবাধিকারের কথা বেশি বলে, সবসময় বলে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে। তবে দেশগুলো মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য সাড়ে তিন গুণ থেকে ১৫ গুণ বাড়িয়েছে। জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যাংকগুলো ৪ বছরে ২৪০০ কোটি ডলারের নিশ্চয়তা মিয়ানমারকে দিয়েছে। জাতিসংঘের ভোটে আমাদের যে অগ্রাধিকার ইস্যু ‘প্রত্যাবাসন’ তা প্রতিফলিত হয়নি দেখে আমরা ভোটদানে বিরত থেকেছি। আর সেই সঙ্গে শক্ত বিবৃতিও দিয়েছি। যে দেশগুলো মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়ার পর আমরাও তাদের বলেছি যে বাংলাদেশ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। সেই সঙ্গে কোনো সহিংসতা চাই না। আর মিয়ানমার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রত্যাবাসনের তা যাতে পূরণ করে।