জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের বিনিয়োগ চলছেই

জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার তীব্র শঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। তার পরও জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে বিশ্বব্যাংক। গত দুই বছরে এমন প্রকল্পে ২০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। জার্মানভিত্তিক পরিবেশ আন্দোলনকারী গ্রুপ আর্জওয়াল্ডের গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ।

আর্জওয়াল্ডের গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রতিরোধে ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে বিশ্বব্যাংক। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যেও প্রায় কাছাকাছি অংকের বিনিয়োগ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য এবং তাদের বিনিয়োগ সহায়তা পাওয়া বিভিন্ন প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, কোম্পানি ও সরকারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আর্জওয়াল্ড। গ্রুপটি প্রতি বছরই তাদের তথ্য হালনাগাদ করে।

আর্জওয়াল্ডের সর্বশেষ তথ্য বলছে, জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে, তার সিংহভাগই হয়েছে গত পাঁচ বছরে। এ সময়ে নতুন প্রকল্পে সরাসরি অর্থায়ন, ঋণ, গ্যারান্টি ও মূলধনি বিনিয়োগ হিসেবে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে বিশ্বব্যাংক।

এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, তেল ও গ্যাস খাতে আপস্ট্রিম ইনভেস্টমেন্ট তারা এরই মধ্যে বন্ধ করেছে। তবে যেসব উদীয়মান দেশের অর্থনীতি অনেকাংশে এসব সম্পদনির্ভর, তাদের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রেখেছে তারা। অবশ্য সেক্ষেত্রে তারা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে এমন জ্বালানি কর্মকৌশল গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছে, যা অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হবে।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, ‘নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সেবা কভিড-১৯ প্রতিরোধ ও প্রতিহত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। হাসপাতাল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্ন, নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী জ্বালানি সরবরাহের জন্য আমরা সরকার, বেসরকারি খাত ও অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছি।’

জলবায়ু সম্পর্কিত প্যারিস চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো বৈশ্বিক তাপমাত্রার গড় বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা। কিন্তু এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০৩০ সাল নাগাদ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যে পর্যায়ে সীমিত রাখা দরকার, বর্তমানে বিশ্ব তার চেয়ে ১২০ শতাংশ বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পথে রয়েছে। জাতিসংঘের জলবায়ু কর্মসূচির গবেষকরা এমনটাই জানিয়েছেন। অবশ্য আশার কথা হলো, কার্বন নিঃসরণ কমানো ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের গতি শ্লথ করার লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব কমাতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে জলবায়ুতে যে পরিবর্তন আসবে, তা ২০৩০ সাল নাগাদ ১০ কোটির বেশি মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেবে। আর্জওয়াল্ড বলছে, বিশ্বব্যাংক একদিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমানো ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধের কথা বলছে, অন্যদিকে তারা নিজেরাই এ সমস্যার বড় একটি অংশ হয়ে উঠেছে।

আর্জওয়াল্ডের মাল্টিল্যাটারাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকবিষয়ক সিনিয়র অ্যাডভাইজার হেইকি মেইনহার্ট বলেছেন, ‘হালনাগাদ তথ্যনির্ভর সর্বশেষ প্রতিবেদনই জানিয়ে দিচ্ছে যে জাতিসংঘ জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে তাদের সমর্থন কমায়নি। তারা জ্বালানি প্রযুক্তিতে পরিবর্তন আনার বিষয়ে দেশগুলোকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, অথচ তারা নিজেরাই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।’

আর্জওয়াল্ডের প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব প্রকল্প বিশ্বব্যাংকের সহায়তা পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্রাজিলের আপস্ট্রিম তেল ও গ্যাস প্রকল্প। এতে কৌশলগত সহায়তা কর্মসূচির অধীনে চলতি বছরের মে মাসে অতিরিক্ত ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের তহবিল বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

এছাড়া গত বছরের মার্চে গায়ানায় পেট্রোলিয়াম রিসোর্স গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টে ২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে বিশ্বব্যাংক। অন্তত আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সেখানে ব্যাংকটির সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *