জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হলেও শিগগিরই গতি পাচ্ছে না অর্থনীতি

২০২০ সালকে বিদায় দেয়ার জন্য মুখিয়ে ছিল গোটা বিশ্ব। নভেল করোনাভাইরাস নামের এক মহামারীতে গোটা বিশ্ব রীতিমতো জিম্মি অবস্থায় ছিল বছরটিতে। কিন্তু নতুন বছরে সবার প্রত্যাশা হচ্ছে অর্থনীতি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। সত্যি কথা হচ্ছে, মানুষের জীবনযাত্রা হয়তো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে, কিন্তু অর্থনীতির ফেরা এখনো অনেক দূরের পথ। যেমন মার্কিনিদের দিকেই তাকানো যাক, শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশের মানুষ হিসেবে তারা সে পরিমাণ অর্থ খরচ করতে পারছে না, যা তারা করতে অভ্যস্ত। লাখো মানুষ এখন বেকার জীবনের ঘানি টানছে। সেসব দেশ, যাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হচ্ছে ভোক্তাব্যয়, তাদের জন্য এটি একটি বিশাল সমস্যা। খবর সিএনএন বিজনেস।

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা এখন অনেকাংশে নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তৃত বিতরণের সঙ্গে জড়িত। বেশির ভাগ মানুষের এটি পেতে পেতে ২০২১ সালের অনেকটা সময় পার হয়ে যাবে। কেউ কেউ হয়তো আরো পরে গিয়ে পাবে, যার অর্থ অসংখ্য মানুষ ও তাদের পরিবারের জীবন খুব শিগগিরই স্বাভাবিক হতে যাচ্ছে না।

ভাইরাসকে থামানোর জন্য আরোপ করা নানা ধরনের বিধিনিষেধ ভোক্তাব্যয়কে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির দুই-তৃতীয়াংশই চালিত হয় এ খাত থেকে। এর কারণ অবশ্য বেশ সরল, আপনি যখন বেশির ভাগ সময় ঘরে বসে থাকবেন, তখন আপনি নিশ্চিতভাবেই কম অর্থ খরচ করবেন।

সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ভ্যাকসিনের বিস্তৃত বিতরণের পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার যে প্রত্যাশা, সেটি পূরণ হওয়ার আগে আরো একটু খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হবে। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ সাইমন ম্যাকাডাম বলেন, দুর্বল অর্থনৈতিক কার্যক্রম ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকেও অব্যাহত থাকবে।

এইচএসবিসির অর্থনীতিবিদ জেমস পোমেরোই ও হেনরি ওয়ার্ডের মতে, এমনকি এই অর্থনৈতিক দুরবস্থার সময়ে যেসব সৌভাগ্যবান মানুষ তাদের চাকরি বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছেন, তারা এ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করার পরিবর্তে জমানোর দিকে অধিক মনোযোগ দিয়েছেন।

তবে তারা বলছেন, ভ্যাকসিন ছাড়াও আরো বেশি ব্যয় হয়তো ২০২১ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির মূল চালক হয়ে উঠবে।

চাকরির বাজারের জন্যও এটা একটা চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর ভোক্তাব্যয় ছাড়া নিজেদের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। কিন্তু চাকরি সংকটের এমন বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে মানুষ তাদের সব অর্থ খরচ করে ফেলতে পারবে না।

মহামারীতে লাখো শ্রমিক তাদের জীবিকা হারিয়েছেন। এখন টিকে থাকার জন্য তাদের দৃষ্টি সরকারি সহায়তার দিকে। পাশাপাশি অনেক লোকের কর্মঘণ্টা এখন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

মার্কিন শ্রম বিভাগ বলছে, ডিসেম্বরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯ মিলিয়নের বেশি মানুষ ফেডারেল সুবিধা গ্রহণ করেছে। এর অর্থ হচ্ছে, এই সংখ্যক মানুষ পুরোপুরিভাবে অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারছে না এবং নিশ্চিতভাবেই অধিক অর্থ ব্যয় করতে পারছে না।

পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে ডিসেম্বরে চাকরিবাজারের পুনরুদ্ধার স্থবির হয়ে পড়লে। গত মাসে দেশটিতে ১৪ লাখ লোক বেকারের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। আতিথেয়তা খাত ও রেস্টুরেন্ট শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে মূলত এই পতন দেখা গেছে। পাশাপাশি ভাইরাসের সংক্রমণ থামানোর জন্য নেয়া ব্যবস্থাগুলো তো রয়েছেই।

তবে যুক্তরাষ্ট্র এখানে কেবল একটি দৃষ্টান্ত। প্রায় সব দেশেরই অর্থনীতি এখন এমন বেহাল সময় পার করছে। হয়তো ভ্যাকসিন গ্রহণের মাধ্যমে সামনের দিনগুলোয় জীবনযাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক হবে। কিন্তু অর্থনৈতিক সুরক্ষা ফিরে আসা এখনো অনেক দূরের পথ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *