ছয় মাসে বিটকয়েনের দাম কমেছে ৫০ শতাংশ

কয়েক মাস ধরেই নিম্নমুখী রয়েছে বিটকয়েনের দাম। সর্বশেষ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভার্চুয়াল মুদ্রাটির দাম ৩৪ হাজার ডলারের নিচে নেমে গেছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠান কয়েনবেস এ তথ্য জানিয়েছে। এ নিয়ে বাজারমূল্যের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম গত বছরের নভেম্বরে শীর্ষে উঠার পর এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কমেছে। খবর বিবিসি ও সিএনবিসি।

গত কয়েক দিন ধরে বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারগুলোয় মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফলে ডিজিটাল সম্পদের মূল্যও কমে যাচ্ছে। গতকাল জাপানের বেঞ্চমার্ক নিক্কেই ইনডেক্স প্রায় ২ শতাংশ কমে গেছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বিটকয়েনের দখলে। মুদ্রাটির মোট বাজারমূল্য ৬৫ হাজার কোটি ডলার। বিটকয়েনের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির দামও নিম্নমুখী রয়েছে। গত সপ্তাহে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি ইথেরিয়ামের দাম ১০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। যদিও চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার তুলনামূলক শান্ত রয়েছে। গত কয়েক বছরে ডিজিটাল মুদ্রার বাজারে বড় ধরনের উত্থান-পতন লক্ষ্য করা গেছে।

গত সপ্তাহে বিটকয়েনের দাম কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। গতকাল ডিজিটাল মুদ্রাটির লেনদেন হয়েছে ৩৩ হাজার ৫০০ ডলারে। চলতি বছর একটি সংকীর্ণ পরিসরে বিটকয়েনের ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। কারণ মুদ্রাটি ২০২১ সালের শেষ দিকে শীর্ষ উচ্চতায় উঠার পর দাম পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। গত বছরের নভেম্বরে সর্বোচ্চ ৬৭ হাজার ৮০২ ডলার ৩০ সেন্টে প্রতি বিটকয়েন লেনদেন হয়েছিল। সে তুলনায় বর্তমানে দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

কয়েনগেকো ডটকমের তথ্য অনুসারে, গত রোববার বিশ্বজুড়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারমূল্য ছিল ১ লাখ ৬৮ হাজার কোটি ডলার। ওইদিন ১১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন হয়েছে।

পুঁজিবাজারে বছরের পর বছর ধরে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের আধিপত্য ছিল। তবে সাম্প্রতিককালে হেজ ফান্ড ও মানি ম্যানেজারের মতো বাজারে পেশাদার বিনিয়োগকারীদের আগমন ঘটেছে। এজন্য লেনদেন ও বাজার পরিস্থিতিতেও পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে আরো বেশি ঐতিহ্যবাহী বিনিয়োগকারীরা ডিজিটাল সম্পদের ব্যবসায় ঝুঁকছেন। ফলে পুঁজিবাজারে মন্দা পরিস্থিতির কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সির দামেও পতন হচ্ছে। তবে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিনিয়োগকে প্রযুক্তি স্টকের মতো ঝুঁকির সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করছে।

বাজারে অনিশ্চয়তার সময়ে ঐতিহ্যবাহী বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ হিসেবে দেখা শেয়ার বিক্রি করে দেন এবং সেই অর্থ নিরাপদ বিনিয়োগে স্থানান্তরিত করেন। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা করার চেষ্টা হিসেবে সুদের হার বাড়িয়েছে। এটি কিছু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরো উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে যে মূল্যস্ফীতি ও ঋণের উচ্চ খরচ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতিতে ইউক্রেন সংকটের প্রভাব নিয়েও উদ্বিগ্ন রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে গত বছর দুটি দেশ আইনিভাবে বিটকয়েন লেনদেনের অনুমতি দিয়েছে। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে এল সালভাদর এবং পরবর্তীতে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক এ অনুমোদন দেয়। এল সালভাদর ঘোষণা দিয়েছে, ভোক্তারা ডলারের পাশাপাশি সমস্ত লেনদেনে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করতে পারবে। তবে এটি আর্থিক বাজারের স্থিতিশীলতা নষ্ট এবং বেআইনি কার্যক্রমে অর্থের যোগান দেয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *