চীনা প্রযুক্তি খাতকে প্রভাবিত করতে নতুন মার্কিন নীতি

চীনকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে নতুন নীতি গ্রহণ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সিনেটে এ-সংক্রান্ত বিল ‘দ্য স্ট্যাটাজিক কম্পিটিশন অ্যাক্ট ২০২১’ উত্থাপন করা হয়েছে। ফলে এ বিল অনুমোদন পাওয়ার পর দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির মধ্যে লড়াইটা আরো জোড়দার হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি ইনস্ট্রাক্টর ও সাংহাইভিত্তিক টাইডাল ওয়েভ সলিউশনের অংশীদার ক্যামেরন জনসন বলেন, নতুন এ মার্কিন নীতি চীনের প্রতিটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, এ নীতির ফলে নতুন প্রযুক্তি উন্নয়ন, বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা, মার্কিন মিত্রদেশগুলোয় বিক্রি, চীন সরকারের কাছ থেকে সমর্থন আদায় করার পাশাপাশি মার্কিন প্রযুক্তি খাত কীভাবে বৈশ্বিক সরকারব্যবস্থা ও মান নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২৮৩ পৃষ্ঠার এ বিলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসংক্রান্ত বিভাগে আইনপ্রণেতারা আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে বিশ্বব্যাপী তাদের বিক্রয় সরবরাহ বৃদ্ধিতে সব ধরনের সহযোগিতা করার কথা উল্লেখ করেন। নীতির আলোকে কোম্পানিগুলোকে ৫জি মোবাইল নেটওয়ার্ক ও সমুদ্র তলদেশের মধ্য দিয়ে কেবল সরবরাহে সম্পূর্ণ ও আংশিক সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক আলোচনায় সহযোগিতা ও সাইবার নিরাপত্তার জোরদার করতেও সহযোগিতা করা হবে। আগামী সপ্তাহে এ নতুন নীতি নিয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে বলেও জানানো হয়।

বিলে বলা হয় বিশ্বব্যাপী চীনের উৎপাদন ও প্রযুক্তিসংক্রান্ত সুপারপাওয়ার হয়ে ওঠা এবং চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নতুন উদ্ভাবন প্রচার করার পেছনে যথেষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রচলিত আন্তর্জাতিক নিয়মের তোয়াক্কাও করছে না চীন।

সিনেটে উত্থাপিত এ বিলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাবও তোলা হয়। বলা হয় চীন জিনজিয়াং প্রদেশে জোরপূর্বক শ্রম ও নির্বাসনসহ শ্রমিকদের ওপর বিভিন্ন নির্যাতন ও বৈষম্য চালু রেখেছে। মার্কিন মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সেখানে ১০ লাখের বেশি উইঘুর মুসলিম ও অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের পুনঃশিক্ষাদান কার্যক্রমের আড়ালে জোরপূর্বক শ্রম আদায় করে নেয়া হচ্ছে। যদিও বেইজিং সবসময়ই এ ধরনের অভিযোগকে অস্বীকার করে আসছে। এসঙ্গে চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে আরো জোরদার করার জন্য ১ কোটি ডলারের একটি প্রস্তাবও রাখা হয় এ বিলে।

মার্কিন সিনেট কমিটির বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক এক বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে চীনের আগ্রাসী আচরণকে মোকাবেলা ও লাগাম টেনে ধরতেই মূলত এ বিল উত্থাপন করা হয়। পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি হরণকারীদের শনাক্ত করা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনা ভর্তুকি, হংকংয়ে মার্কিন রফতানি প্রতিহত করতে চীনা নীতির প্রতিও লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

বিলে চীনের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি, সামরিক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কারণে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাবও দেয়া হয়।

এ বিল অনুমোদন হলে তাইওয়ানের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের যোগাযোগসংক্রান্ত সব নিষেধাজ্ঞাও বাতিল হবে বলে উল্লেখ করা হয়। ফলে ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের মিত্রদের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রেও প্রভাব রাখবে এ বিল।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *