প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এশিয়া অঞ্চলে ক্রমেই বেড়ে চলছে ইন্টারনেট ট্রাফিকের পরিমাণ। এ ট্রাফিক পরিচালনার সুবিধার্থে সমুদ্রের তলদেশে স্থাপিত কেবল সিস্টেম (আন্ডার সি কেবল নেটওয়ার্ক) ব্যবহারের জন্য অ্যালফাবেট নিয়ন্ত্রণাধীন গুগল ও ফেসবুকের প্যারেন্ট কোম্পানি মেটাকে অনুমতি দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছে বাইডেন প্রশাসন। খবর রয়টার্স।
সম্প্রতি গুগল ও মেটাকে আট হাজার মাইলব্যাপী বিস্তৃত প্যাসিফিক লাইট কেবল নেটওয়ার্ক ব্যবহারের জন্য অনুমতি প্রদানে ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের (এফসিসি) কাছে অনুরোধ জানায় বাইডেন প্রশাসন। এফসিসির অনুমতি সাপেক্ষে তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণের জন্য এ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবে গুগল ও মেটা। সমুদ্রের তলদেশে স্থাপিত এ কেবল নেটওয়ার্ক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাইওয়ান, ফিলিপাইন ও হংকংকে যুক্ত করেছে।
বর্তমানে আন্ডারসি কেবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশ্বের প্রায় সব ইন্টারনেট ডাটা পরিবাহিত হয়। এর মধ্যে ফিলিপাইন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার অংশটুকু ব্যবহারের অনুমতি চাইছে মেটা। অন্যদিকে তাইওয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংযোগ স্থাপনকারী অংশ ব্যবহারের অনুমতি চাইছে অ্যালফাবেট। এ সময় মার্কিনদের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা সুরক্ষা দেয়ার অঙ্গীকার করেছে মেটা ও অ্যালফাবেট। বিশেষ করে চীনের গোয়েন্দা কার্যক্রম থেকে মার্কিন তথ্যগুলোকে সুরক্ষার ব্যাপারে জোর দেয় প্রতিষ্ঠান দুটি।
এর আগে হংকংয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী কেবল ব্যবহারের জন্য অ্যালফাবেট ও মেটার পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। ২০২০ সালে কয়েকটি মার্কিন সরকারি এজেন্সি এ পরিকল্পনা নিষিদ্ধ করার জন্য অনুরোধ করে। মূলত এ কেবল বেইজিং দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় এ নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানায়, অ্যালফাবেট ও মেটার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত একটি চুক্তি প্রয়োজন। মার্কিন নাগরিকদের লাখ লাখ স্পর্শকাতর ব্যক্তিগত তথ্যে চীনের দখল নেয়ার যে প্রচেষ্টা, তা প্রতিহত করতেই এমনটা প্রয়োজন।
২০২০ সালে গুগল জানায়, তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত গুগলের ডাটা সেন্টারে ক্রমবর্ধমান ডাটা ট্রাফিক পরিচালনার সুবিধার্থে তাদের আন্ডারসি কেবল সংযোগ প্রয়োজন। মেটার এক মুখপাত্র জানান, কেবল সিস্টেমের দ্বারা ইন্টারনেটের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনসের মধ্যকার কেবল সিস্টেমটি যথেষ্ট সুরক্ষিত এবং উন্নত এনক্রিপশন দ্বারা তথ্যগুলো নিরাপত্তা পেয়ে থাকে। এ কেবল সংযোগের দ্বারা লোকজন একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন কনটেন্ট শেয়ার করতে সক্ষম হবে।
জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত চুক্তির আওতায় প্রতি বছর স্পর্শকাতর তথ্যের ঝুঁকির ব্যাপারে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে অ্যালফাবেট ও মেটাকে। একই সঙ্গে কোনো ধরনের বিরূপ পরিস্থিতিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেবলগুলোয় ডাটা ট্রাফিক বন্ধ বা সীমাবদ্ধ করার সক্ষমতাও থাকতে হবে কোম্পানি দুটির।
প্রায় তিন শতাধিক সমুদ্র তলদেশীয় কেবল লাইনকে ইন্টারনেট সংযোগের মেরুদণ্ড হিসেবে ধরা হয়। এ কেবল লাইনগুলো দিয়ে বিশ্বের প্রায় ৯৯ শতাংশ ডাটা ট্রাফিক হয়ে আসছে।