গবেষণায় ১০০ কোটি টাকা পাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ অর্থ দেয়া হবে। চলতি অর্থবছরের চেয়ে এটি প্রায় ৩৮ কোটি টাকা বেশি।

সম্প্রতি দেশের স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করেছে ইউজিসি। ৪৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮১ লাখ টাকার রাজস্ব বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। ইউজিসির পূর্ণ কমিশন সভায় এ বাজেট চূড়ান্ত করা হবে। এর মধ্যে গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে সংশোধিত বরাদ্দ ছিল ৬২ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক অর্থবছরের ব্যবধানে দেশের সরকারি খাতের উচ্চশিক্ষায় গবেষণা বরাদ্দ বাড়ল ৬১ শতাংশ।

ইউজিসি বলছে, নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণা সংকটের বিষয়টি তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে। এছাড়া গুণগত গবেষণা না থাকায় উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে যেতে পারছে না দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তাই বিশেষ বিবেচনায় গবেষণা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনেক বড় উল্লম্ফন ঘটানো হয়েছে।
[১] আইসিসির কাছে বিশ্বকাপের ৯টি ভেন্যুর প্রস্তাব বিসিসিআইর ≣ [১] রাউজানে ব্যবসায়ীকে গুলি,ধরাছোঁয়ার বাইরে আসামিরা ≣ [১] হেফাজতে ইসলামের সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরিফ উল্লাহ একদিনের রিমান্ডে

এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্যই নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি। যদিও গবেষণা কম হওয়ার কারণে উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের ক্ষেত্রে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র খুবই অনুজ্জ্বল। দেশের উন্নয়নে গুণগত গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য জোর দিচ্ছি। বিশেষ করে প্রায়োগিক গবেষণায় বেশি অর্থ ব্যয় করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ভাতার নামে শিক্ষকদের মাসপ্রতি দু-চার-পাঁচ হাজার করে টাকা দিচ্ছে। গবেষণার জন্য এভাবে অর্থ বরাদ্দ দেয়ার সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট গবেষণা প্রকল্পের প্রস্তাবের ভিত্তিতে তা যাচাই-বাছাই করে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। গবেষণা শেষে তার ফলও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

ইউজিসির নিজস্ব বাজেটে গবেষণার জন্য ১৩ কোটি টাকা: আগামী অর্থবছরে ইউজিসির নিজস্ব ব্যয় নির্বাহে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। গতকাল ইউজিসির ফাইন্যান্স কমিটির সভায় এ বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। চলতি অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির বাজেট ছিল ৬২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটে গিয়ে তা দাঁড়ায় ৫৬ কোটিতে। আগামী অর্থবছরে ইউজিসির নিজস্ব বাজেট থেকেও গবেষণার জন্য ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পিএইচডি ফেলোশিপসহ গবেষণা-সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমের সহায়তায় এ অর্থ ব্যয় করা হবে।

চলতি অর্থবছরে দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সর্বমোট বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৪৮৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫ হাজার ৪৫৪ কোটি ১২ লাখ টাকার রাজস্ব বাজেট এবং ৫৩টি প্রকল্পের অনুকূলে ৩ হাজার ৩১ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট দেয়া হয়।

দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এখনো গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ভালো করলেও বেশির ভাগের অবস্থানই নাজুক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের সংখ্যা কম। তাই সেখানে মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীও কম। পাশাপাশি গবেষণার জন্য অবকাঠামোর সংকটও রয়েছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, আসলে শুধু গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোই একমাত্র সমাধান নয়। অর্থ বরাদ্দ থাকার কারণে গবেষণা সহজ হয়। তবে গবেষণার জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন, দেশের উচ্চশিক্ষায় সেটি এখনো গড়ে ওঠেনি। এজন্য মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষার্থী বাড়ানো দরকার। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগের গুণগত মানের সঙ্গেও গবেষণা না হওয়ার একটি বড় সম্পর্ক রয়েছে। –

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *