কভিডজনিত বিধিনিষেধের চড়া মূল্য দিচ্ছেন জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীরা

গত বছরের প্রথম দিকেই কভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণে এনেছিল চীন। কঠোর বিধিনিষেধ ও বিস্তৃত পরীক্ষা কার্যক্রমের সুবাধে চীনের বেশির ভাগ অঞ্চলই এখন করোনামুক্ত। তবে এর আগে বছরের মাঝামাঝিতে উত্তর-পূর্ব চীনে আবারো শুরু হয়েছিল কভিডের প্রাদুর্ভাব। ওই সময় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শহর লকডাউন এবং ভ্রমণে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল। ২০২২ শীতকালীন অলিম্পিক সামনে রেখে এ নিয়ন্ত্রণ আরো কঠোর করেছে বেইজিং। এ পরিস্থিতি প্রভাব ফেলেছে দেশটির ভোক্তা ব্যয়ে, বাধা সৃষ্টি করছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে। খবর এপি।

২০১৯ সালের শেষ দিকে প্রথম কভিড-১৯ শনাক্ত হয় চীনে। ‘জিরো টলারেন্স’ কৌশলের মাধ্যমে মহামারী নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে দেশটি। তবে স্থানীয় জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীদের এর চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে বলে উঠে এসেছে অর্থনীতিবিদদের বিভিন্ন মন্তব্যে।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০২২ শীতকালীন অলিম্পিক। বেইজিং ও এর নিকটবর্তী শহর ইয়ানচিং ও জাংজিয়াকও শহরে প্রতিযোগিতাগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অলিম্পিকে বিদেশী ক্রীড়াবিদরা প্রতিযোগিতা করতে পারলেও বিদেশী পর্যটকদের চীনে প্রবেশ করতে দেয়া হবে কিনা তা এখনো জানায়নি সরকার।

গত জুলাইয়ে কভিডের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর চীনের উত্তর-পূর্ব শহর তিয়ানজিনে বেইজিং ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্সি মাত্র একজন গ্রাহক পেয়েছে। বেইজিং এজেন্সির ম্যানেজার ওয়াং হুই বলেন, দুই বছর আগে এ সময় ছিল আমাদের ব্যস্ততম ঋতু। এখন প্রাদুর্ভাবের কারণে গ্রাহকরা তাদের পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। এ বছরটি গত বছরের চেয়েও খারাপ।

বেশির ভাগ দেশ থেকেই চীনে প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং নিজস্ব জনগণকেও ভ্রমণ থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আগামী ৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় শীতকালীন গেমসের কভিডপ্রতিরোধী ব্যবস্থা সম্পর্কে সরকার এখনো চূড়ান্ত বিবরণ দেয়নি। গেমসটিতে প্রায় ২ হাজার ৯০০ ক্রীড়াবিদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এরপর মার্চে প্যারালিম্পিকে আরো ৮০০ জন ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করবেন।

এখন পর্যন্ত চীনে কভিডে সংক্রমিত হয়ে ৪ হাজার ৬৩৬ জন মারা গেছেন। যদিও গত ফেব্রুয়ারির পর কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

গত জুলাইয়ে কভিডের অতি সংক্রামক ধরন ডেল্টার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সাংহাইয়ের পশ্চিমে নানজিং, দক্ষিণ-পূর্বে পুতিয়ান এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের জিয়ামেন ও ইউনান প্রদেশে প্রাদুর্ভাবের ঘটনা ঘটে। তবে প্রতিদিন নতুন সংক্রমণের সংখ্যা অন্যান্য দেশের মতো হাজার হাজার ছিল না। সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক ডজন।

বৈশ্বিক আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাককোয়ারির অর্থনীতিবিদ ল্যারি হু ও সিনিও জি বলেন, কভিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে। তবে এটির লোকসানও অনেক বেশি।

ফুজিয়ান প্রদেশের ২৯ লাখ জনসংখ্যার শহর পুটিয়ানে ১২ সেপ্টেম্বর প্রবেশ স্থগিত করা হয়েছে। সিনেমা, বার ও অন্যান্য পাবলিক সুবিধা বন্ধ ছিল। সুপারমার্কেট ও রেস্তোরাঁগুলোয় গ্রাহকের সংখ্যা সীমিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কয়েকটি কভিড সংক্রমণের পর ফুজিয়ানের একটি উপকূলীয় ব্যবসায়িক কেন্দ্র জিয়ামেনেও প্রবেশ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বন্ধ করা হয়েছে শহরটির বিদ্যালয়গুলোও।

অনলাইনে পুটিয়ানের জুতা বিক্রি করা একজন উদ্যোক্তা সু ই বলেন, কভিডের প্রাদুর্ভাব ও বিধিনিষেধ স্থানীয় শিল্পটিকে বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রাহকরা আমাদের পণ্য সরবরাহের অনুরোধ করছেন, কিন্তু কারখানাগুলোই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর সাধারণত ব্যস্ত সময় থাকে। কিন্তু উৎপাদন ও সরবরাহের ব্যাঘাতে ক্রয়াদেশ অনেক কমে যাবে।

গত বছরের প্রথম দিকে চীনা সরকার ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দেয় এবং কারখানা, দোকান ও অফিস পুনরায় খোলার অনুমতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানের অর্থনীতি সংকোচনের মুখোমুখি হলেও গত বছর থেকেই প্রবৃদ্ধিতে আছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুলাই) চীনের অর্থনৈতিক উৎপাদন আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। এ প্রবৃদ্ধি প্রথম প্রান্তিকে দশমিক ৬ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *