ওমিক্রন সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে বাড়ছে শনাক্ত ভারতে ঊর্ধ্বমুখী মৃতের সংখ্যা

নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলেছে কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওমিক্রনের দ্রুত ছড়ানোর সক্ষমতার কারণে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের মন্ত্রী স্বীকার করেছেন, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে দেরি হয়ে গেছে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার ভারতে প্রথম শনাক্তের পর ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা দুই অংকে পৌঁছেছে। আর গতকাল কভিড-১৯-এ জুলাইয়ের পর একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যু হয়েছে ভারতে।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। দেশটির রয়েল কলেজ অব ইমার্জেন্সি মেডিসিনের প্রেসিডেন্ট ক্যাথেরিন হেন্ডারসন বলেছেন, শীতের শুরু হতে না হতেই হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে, যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যদি ওমিক্রন আক্রান্তের হার বেড়ে যায়, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া অত্যন্ত কঠিন।

ক্যাথেরিন বলেন, আমরা এখনো রোগী ভর্তি করতে চাই। কিন্তু আমাদের জনসাধারণকে বাস্তবতা বুঝতে হবে। এত লোককে সেবা প্রদানের অত্যন্ত কঠিন কাজের সঙ্গে একটু বাড়তি চাপ যুক্ত হলে পরিস্থিতি আরো জটিল করে তোলে। দেশটির বিজ্ঞানীরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের কভিড পরিস্থিতির উন্নয়নকে তছনছ করে দিতে পারে ওমিক্রন। গত মাসে ব্রিটিশ সরকারের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা ওয়েলকাম ট্রাস্টের ডিরেক্টর স্যার জেরেমি ফারার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ওমিক্রন এটা বোঝাচ্ছে যে মহামারী শেষ হওয়া এখনো বহুদূরের পথ।

এ অবস্থায় দেশটির হেলথ সেক্রেটারি সাজিদ জাভিদ আসন্ন ক্রিসমাসে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোর আগে বুস্টার ডোজ টিকা নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইডেন প্রশাসনের বর্তমান চ্যালেঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রে ওমিক্রনের ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো। বিষয়টিকে তার জন্য নতুন রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও বাইডেন বলেছেন, আমরা নতুন ধরনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান ও গতি দিয়ে লড়ছি। ডেল্টাসহ কভিড-১৯-এর মতোই এটিকেও পরাস্ত করার অঙ্গীকার করেন তিনি। বাস্তবতা অবশ্য ভিন্ন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ডেল্টা এখনো বড় উদ্বেগের কারণ। আর করোনা আক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়ায় বিক্ষোভ হয়েছে বেলজিয়ামে। রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ওই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা চলাফেরায় স্বাধীনতার দাবি জানান।

ভারতে ওমিক্রন শনাক্ত দুই অংকে পৌঁছার দিনেই রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যু হয়েছে কভিড-১৯-এ। দেশটিতে জুলাইয়ের পর গতকাল করোনায় মারা গেছেন প্রায় তিন হাজার রোগী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, রোববার একদিনে ২ হাজার ৭৯৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এটি গত ২১ জুলাইয়ের পর থেকে একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক মৃতের ঘটনা। ভারতে গত মার্চ ও এপ্রিলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। ওই সময় প্রতিদিন কয়েক হাজার মৃত্যু ও লাখের বেশি শনাক্ত হয়েছে। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে মোট আক্রান্ত শনাক্ত ও মৃত্যুর সরকারি তথ্যের চেয়ে বাস্তবে সংখ্যাটা আরো বেশি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার কর্নাটকে প্রথম ওমিক্রন শনাক্তের পর মাত্র চারদিনে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১। রাজধানী দিল্লি, রাজস্থান ও মহারাষ্ট্রে ওমিক্রন নিশ্চিত হওয়ার খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, রাজস্থানের জয়পুরে ৯ জনের ওমিক্রন নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া মহারাষ্ট্রের পুনে জেলায় তিন নাইজেরিয়ার নাগরিকসহ সাতজন এবং দিল্লিতে তানজানিয়া সফর একজনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গুজরাট ও কর্নাটকে করোনার নতুন ধরন শনাক্ত হয়। আক্রান্তদের অর্ধেকেরও বেশি টিকা গ্রহণকারী।

এদিকে বেলজিয়ামের একটি চিড়িয়াখানায় দুই জলহস্তীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। চিড়িয়াখানাটির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। খবরে বলা হয়, এন্টার্প চিড়িয়াখানায় ১৪ বছর বয়সী ইমানি ও ৪১ বছর বয়সী হারমিয়েনের কভিড-১৯ ধরা পড়ে। যদিও চিড়িয়াখানার কর্মীরা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। তবু সতর্কতার জন্য জলহস্তী দুটিকে আলাদা রাখা হয়েছে। ধারণা হচ্ছে, প্রাণীদের মধ্যে করোনা শনাক্তের এটিই প্রথম নজির।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *