ইরানে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকানো দুষ্কর বাইডেনের

ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা জো বাইডেনের জন্য সহজ হবে বলে জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, একটু সদিচ্ছা ও জটিল এই সমস্যা সমাধান করতে পারে। তবে সাধারণ দৃষ্টিতেই বোঝা যাচ্ছে, ইরানের অর্থনীতিতে ট্রাম্পের রেখে যাওয়া বেশির ভাগ ধ্বংসস্তূপ স্থায়ী হবে। খবর ব্লুমবার্গ।

২০১৫ সালে বারাক ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে হওয়া পারমাণবিক চুক্তির অধীনে হাজার হাজার ব্যবসার জন্য ইরানের অর্থনীতিতে বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। পরিবর্তে দেশটি আরো বেশি নিষেধাজ্ঞা, আন্তর্জাতিক তেলবাজার থেকে প্রত্যাখ্যাত এবং ২০১৮ সাল থেকে ১২ শতাংশ অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হয়েছে। তার পরও আবার দেশটি নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সবচেয়ে খারাপভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।

পশ্চিমা সংস্থাগুলো ও ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা পরামর্শদাতাদের মতে, বাইডেন যুগের কোনো পুনরুদ্ধার এখন শিশুর পদক্ষেপের মতো হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে নীতির নাটকীয় পরিবর্তনের অর্থ হলো নতুন চুক্তির আত্মবিশ্বাস তৈরির লড়াই।

তেহরানভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এরা এন্টারপ্রাইজের প্রধান নির্বাহী সাইরাস রাজ্জাগি বলেন, কোটি কোটি ডলার ক্রেডিট লাইন প্রসারিত হয়েছিল, প্রচুর প্রত্যাশা ছিল এবং তার পরে ট্রাম্প সেই চুক্তি গলা টিপে মেরেছিলেন। এবার সবাই অনেক সতর্ক। প্রত্যাশা কম, তবে উচ্চাশা রয়েছে।

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তিনি ইরানের সঙ্গে পুনরায় চুক্তিতে ফিরে যাবেন। চুক্তিতে ইউরোপীয় স্বাক্ষরকারীরা পারমাণবিক কর্মসূচি সীমাবদ্ধ করার বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর চুক্তি নিয়ে পুনরায় আলোচনা শুরু হয়েছে।

সে সময় ফরাসি তেল জায়ান্ট টোটাল এসই ইরানের তেল মন্ত্রণালয় ও চীনের সিএনপিসির সঙ্গে ৫০০ কোটি ডলারের একটি যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। গাড়ি নির্মাণ সংস্থা পিউজিওট এসএ ২০১৮ সালের জুনে ইরানে আরো গাড়ি উৎপাদন করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছিল। এর মাধ্যমে এক দশকের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো সংস্থাটি ফ্রান্সের বাইরে তার বৃহত্তম বাজার ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। ইরানের বাজারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে উভয় সংস্থার কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।

বারাক ওবামার আরোপিত নিষেধাজ্ঞার চেয়ে ট্রাম্পের তথাকথিত ‘সর্বাধিক চাপের’ কৌশলটি অনেক বেশি নির্মম ছিল। তেল বিক্রি বন্ধ হওয়ায় ইরানের অর্থনীতিতে ধস নেমেছিল। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে অপরিশোধিত তেল রফতানির পরিমাণ প্রতিদিন ২০ লাখেরও বেশি ব্যারেল থেকে গত মাসে দিনে ১ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেলে নেমে এসেছে। নিষেধাজ্ঞাগুলো সহজ করার কয়েক মাসের মধ্যে ইরান তেল রফতানি দিনে প্রায় ১০ লাখ ব্যারেল বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছে জেপি মরগান চেজ অ্যান্ড কো.।

দেশীয় উৎপাদনকারীদের দিকে পরিবর্তিত হওয়া দেশটির অর্থনীতি বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্যও নতুন সমস্যা তৈরি করবে বলে মনে করেন ইরানের ওষুধ ও ভোক্তাপণ্য সংস্থায় বিনিয়োগ করা সুইডিশ সংস্থা সের্কল্যান্ড ইনভেস্টের প্রধান নির্বাহী ওমিদ গোলামিফার। তিনি বলেন, পারমাণবিক চুক্তি আবার সম্পন্ন হলেও বহুজাতিক সংস্থাগুলো খুব সতর্ক থাকবে। কারণ তারা সহসাই ইরানে বড় ব্যবসার সুযোগ পাবে না। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যগুলো বাজারে প্রতিস্থাপিত হওয়ায় আপনি বাজারের সিংহভাগ অংশ হারিয়ে ফেলেছেন।

বুধবার প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেছেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের দিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের যে সম্পর্ক ছিল, সে সময়ের মতো সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে পারলে তা অনেক সমস্যা ও সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে। আর এটি রাতারাতি ঘটবে না।

লন্ডনভিত্তিক আইন সংস্থা হারবার্ট স্মিথ ফ্রিহিলসের ইরানবিষয়ক প্র্যাকটিসের সহপ্রধান উইলিয়াম ব্রিজ বলেন, কিছু বিষয়ে এরই মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে তারা খুব সতর্ক। কেউ কোনো বিশাল পরিকল্পনা করছে না।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *