আয়কর দেন না মার্কিন শীর্ষ ধনীরা!

যুক্তরাষ্ট্রের অতিধনীদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই কর ফাঁকির অভিযোগ ছিল। এবার সে-সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে প্রোপাবলিকা নামের একটি সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট। তারা জানিয়েছে, বিশ্বের কয়েকজন অতিধনীর আয়কর দাখিলের কাগজপত্র তাদের সংগ্রহে এসেছে। কর ফাঁকির তালিকায় রয়েছেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস, টেসলার সহপ্রতিষ্ঠাতা ইলোন মাস্ক, সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ব্লুমবার্গ ও ওয়ারেন বাফেটের মতো সম্পদশালী ব্যবসায়ী। খবর মার্কেটওয়াচ ও বিবিসি।

ওয়েবসাইটটি দাবি করেছে, ২০০৭ ও ২০১১ সালে অ্যামাজনের জেফ বেজোস কোনো আয়কর দেননি। একইভাবে ২০১৮ সালে আয়কর দেননি ইলোন মাস্ক।

তবে আয়করের এ তথ্য প্রকাশকে বেআইনি বলে মন্তব্য করেছেন হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্র। প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, গোপনীয় কোনো নথি সরকারের অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা বেআইনি কাজ। তবে বিষয়টি নিয়ে এফবিআই ও কর কর্তৃপক্ষ তদন্ত চালাচ্ছে।

প্রোপাবলিকা বলছে, অতিধনী মার্কিনদের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবার তথ্যের বিশাল ভাণ্ডার নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে তারা। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরো বিশদ তথ্য প্রকাশ করা হবে। তাদের দাবি, ২৫ শতাংশ অতিধনী মার্কিন তুলনামূলক কম আয়কর জমা দেন।

ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, আইনি শুল্ক কৌশল ব্যবহার করে বেশির ভাগ ধনী মার্কিন তাদের ফেডারেল কর কমিয়ে দেখান কিংবা একেবারেই না দেয়ার চেষ্টা করেন। যদিও গত কয়েক বছরে তাদের সম্পদ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কিন্তু তারা সে অনুপাতে আয়কর দিতে চান না। কেবল ধনীরাই নন, তাদের পাশাপাশি অনেক সাধারণ নাগরিকও আইনি ফাঁকফোকর গলে যথাযথ আয়কর না দিয়েই পার পেয়ে যান।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে প্রোপাবলিকা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ জন ধনী নাগরিকের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বেড়ে ৪০ হাজার ১০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে এ সময়ে তারা কেবল ১ হাজার ৩৬০ কোটি ডলারের আয়কর দিয়েছেন।

কর ব্যবস্থায় সমতা ফিরিয়ে আনতে এবং দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এসব অতিধনীদের ওপর করহার বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি চান করের শীর্ষ হার দ্বিগুণ করতে। বাইডেনের পরিকল্পনা হলো করপোরেট কর ২১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা। ধনী ব্যক্তিদের করের পরিমাণ বাড়ানোর প্রক্রিয়া নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যেই এমন অভিযোগ উঠল।

কর ফাঁকির অভিযোগ ওঠা কয়েকজন ব্যবসায়ীর বক্তব্য জানতে চেয়েছিল বিবিসি। এদের মধ্যে মার্কিন বিলিওনেয়ার জর্জ সোরোসের অফিস বিবিসির প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি। তবে এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, কিছু বছর ব্যবসায় লোকসানের কারণে জর্জ সোরোস আয়কর দিতে পারেননি।

অন্যদিকে নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র ও ব্লুমবার্গের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ব্লুমবার্গ এ তথ্য ফাঁসের প্রক্রিয়াকে বেআইনি বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছেন।

প্রোপাবলিকার বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, কীভাবে বাজেট কমানোর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবাকে ধনী ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর করের আইন প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিবেদন প্রকাশের পরই মূলত তাদের কাছে কর ফাঁকির নথিগুলো আসে বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। তবে কীভাবে বা কোন মাধ্যম থেকে তারা এসব নথি পেয়েছে, সে সম্পর্কে কিছু বলেনি প্রোপাবলিকা। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ১৫ বছরের বেশি সময়ের ধনী মার্কিনদের আয়কর প্রদানের তথ্য আছে বলে নিশ্চিত করেছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *