আলোচিত মামলার বিচারে ‘গতি’

ঢাকা: করোনা পরীক্ষা না করে মনগড়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে জেকেজি নামক একটি বেসরকরি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠে রিজেন্ট নামে আরেকটি হাসপাতালের বিরুদ্ধেও।
মহামারি করোনার মধ্যে বিষয়টি দেশ-বিদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।

তবে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বসে থাকেনি। দুটি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের আইনের হাতে সোপর্দ করেছে। আদালতে দাখিল হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন মামলার অভিযোগপত্র। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে দুই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণও শেষ পর্যায়ে।

বিচারের এ দ্রুত গতিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আইনজীবীর। তারা বলছেন, স্পর্শকাতর মামলা হওয়ায় এসব মামলার দ্রুত বিচার হচ্ছে। দেশবাসীও এসব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চায়। যেখানে তারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিলেন, প্রতারণা করেছেন, অনৈতিক কাজ করেছিলেন।

ফৌজদারি আইনের বিশেষজ্ঞ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, অবশ্যই ভালো। এসব মামলার দ্রুত বিচার হচ্ছে। আই এম হ্যাপি। এ রকমই হওয়া উচিত। তবে মামলার সব দিক খেয়াল রাখতে হবে। প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) অনেক কষ্ট করছেন দ্রুত বিচারে। এজন্য তাদের সাধুবাদ জানাই।

ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, বিষয়গুলো স্পর্শকাতর। করোনা রিপোর্ট নিয়ে যে প্রতারণা— এটা তো মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। এটা অনেক আলোচিত। জনগণও এ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চায়।

তিনি বলেন, মামলগুলোর সাক্ষীও কম। আবার তাদের পাওয়া যাচ্ছে। তাই এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।

জেকেজি
গত ২৩ জুন করোনার ভুয়া সনদ দেওয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে আরিফুলসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর থানা হাজতে থাকা অবস্থায় আরিফুলের ক্যাডার বাহিনী ভাঙচুর ও হামলা করে থানায়। মারধর করে পুলিশকে।

করোনার ভুয়া রিপোর্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্ণধার আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনা শারমিন হোসেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের একজন চিকিৎসক।

গত ১২ জুলাই সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে আনা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন জেকেজির প্রতারণা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে তেজগাঁও থানায় আগেই আরিফুলের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

পরদিন ১৩ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। সাবরিনার রিমান্ড চলাকালেই গত ১৫ জুলাই কারাগারে থাকা তার স্বামী আরিফুলকে চারদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ১৭ জুলাই সাবরিনাকে ফের দুদিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। রিমান্ডে নিয়ে দুজনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।

এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন— আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা।

গত ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক লিয়াকত আলী। অভিযোগপত্রটি দেখার পর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুলফিকার হায়াত তা বিচারের জন্য বদলির আদেশ দেন। এরপর বিচারের জন্য মামলাটি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাফুজ্জামান আনছারীর আদালতে আসে।

এই মামলার অভিযোগপত্রে সাবরিনা ও আরিফুলকে জালিয়াতি ও প্রতারণার মূল হোতা ও বাকি ছয়জনকে অপরাধে সহায়তাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

গত ২০ আগস্ট একই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

রিজেন্টের সাহেদ
গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম ধরা পড়ে। পরদিন ৭ জুলাই রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। পরে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।

গত ১৫ জুলাই সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এরপর তাকে নিয়ে উত্তরায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব। পরে উত্তরা পশ্চিম থানায় র‌্যাব অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে।

অস্ত্র মামলায় গত ৩০ জুলাই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মো. শায়রুল এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর গত ১৩ আগস্ট মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুলফিকার হায়াত।

অভিযোগপত্র দাখিলের দিন সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, সাহেদ যখন আমাদের কাছে রিমান্ডে ছিলেন তখন তার ভাষ্যমতে, তার ব্যবহার করা গাড়িটি আমরা জব্দ করি এবং গাড়ি থেকে অবৈধ অস্ত্র জব্দ করি। আমরা তদন্তে অভিযোগপত্র ও মামলার ডকেটে (মামলার নথিপত্র) সব উপস্থাপন করেছি।

গত ২৭ আগস্ট একই আদালত এ মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। বর্তমানে অস্ত্র মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *