আবারও চাপে বিএনপি, ১৬ মামলায় ১৪৭৮ নেতা-কর্মী আসামি

আবারও চাপে পড়েছে বিএনপি। ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনের দিন রাজধানীতে নয়টি বাসে আগুনের ঘটনায় প্রধান দুই দল পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করলেও বিএনপির ১ হাজার ৪৭৮ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নতুন করে ১৬টি মামলা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে অসংখ্য। বাসে কারা আগুন দিল সে ঘটনা এখনো রহস্যময়। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। তবে বিএনপির মধ্যম সারির নেতাদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভোট উৎসবে মাঠে থাকলেও ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আবারও আত্মগোপনে চলে গেছেন। অনেকেই মোবাইল ফোন বন্ধ করে বাসাবাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। এরই মধ্যে অর্ধশত নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, অনেক নেতা-কর্মীর বাড়িতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। এরই মধ্যে দুই ছাত্রদল নেতাকে গুম করা হয়েছে বলেও অভিযোগ দলটির।

[৩]দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ও নির্বাচনের ভবিষ্যৎ অনেকটাই অনিশ্চিত। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যেও হতাশা বিরাজ করছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তার দেশে ফেরা অনেকটা অনিশ্চিত। এ অবস্থায় দলের মধ্যে এক ধরনের নেতৃত্বশূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকজন নেতা পদত্যাগও করেছেন। আরও কয়েকজন নেতা দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বেফাঁস মন্তব্য করে নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন। যদিও বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, দল পরিচালনায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তারেক রহমানের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে স্থায়ী কমিটি এখন দল পরিচালনা করছে। অন্যদিকে বিএনপির মিত্র ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও টানাপড়েনের সম্পর্ক চলছে। ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি প্রায় এক যুগেও দল গুছিয়ে উঠতে পারেনি। অঙ্গসংগঠনগুলো পুনর্গঠন করতে গিয়ে মাঠের কোন্দল নতুন করে শুরু হয়েছে। নানা অভিযোগ আসছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিরুদ্ধে।

বিএনপি চাপে আছে কি না এমন প্রশ্নে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘চাপে আছে ঠিক বলা যাবে না। তবে এত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা-হামলা, গুম-খুনে নেতা-কর্মীরা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। এর পরও বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। দলে নেতৃত্বশূন্যতার সৃষ্টি হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আমরা স্থায়ী কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে পরামর্শ করেই দল পরিচালনা করছি।’
[১] পাবনায় অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার ≣ [১] অফিসের যে জায়গাগুলো জীবাণুর প্রজননস্থল ≣ সিরিজ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠালো অস্ট্রেলিয়া

তিনি অভিযোগ করেন, নিজেদের নানামুখী ব্যর্থতাকে আড়াল করতেই তাদের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এখন গাড়িতে আগুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে সরকার। আর এর দায় চাপাচ্ছে বিএনপির ওপর। সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে নিতেই এই অপতৎপরতা। মনে রাখতে হবে, বিএনপি একটি উদারপন্থি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলেই বিশ্বাস করে বিএনপি। চোরাগোপ্তা হামলা বা উগ্রপন্থাকে কখনোই বিএনপি প্রশ্রয় দেয় না। এখন সরকার নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে মামলা ও তাদের গ্রেফতার করে হয়রানির নতুন মাত্রা শুরু করেছে।
দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে এখন মতভেদ শুরু হয়েছে। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট-ফ্রন্টে আসন বণ্টন ও প্রতীক নিয়ে শুরু হয় দলের অভ্যন্তরীণ বাদানুবাদ। পরে গুটিকয় এমপিকে নিয়ে সংসদে যাওয়ার প্রশ্নেও মতভেদ প্রকাশ্যে চলে আসে। এরপর দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে স্থায়ী কমিটিতে দুজনকে নিয়োগসহ সর্বশেষ উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নিয়েও শীর্ষ পর্যায়ে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। এখনো চলমান নানা ইস্যুতে শীর্ষ নেতৃত্বে টানাপড়েন অবস্থান চলছে বলে জানা গেছে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিএনপির তৃণমূল নেতৃত্বে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে লক্ষাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা রয়েছে। দুই মামলার দ-প্রাপ্ত আসামি হয়ে দুই বছর সাজাও ভোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দুই দফায় এক বছরের জন্য তার সাজা স্থগিত করা হয়। বর্তমানে তিনি বাসায় থাকলেও রাজনীতি করতে পারছেন না। বিএনপি বলছে, বেগম জিয়া এখন ‘গৃহবন্দী’। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও অর্ধশত মামলা রয়েছে। কয়েকটিতে তার সাজাও হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ৮৬টি মামলা। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি রাজনৈতিক মামলায় জেলও খেটেছেন। দলের স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও রয়েছে হাজার হাজার রাজনৈতিক মামলা।

দলটির অভিযোগ, এ পর্যন্ত তাদের প্রায় ৪০০ নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। সর্বশেষ ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনের পরদিন ১৩ নভেম্বর ফার্মগেটের খামারবাড়ী থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও পল্টন এলাকা থেকে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব জায়গায় খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটকের বিষয়টি স্বীকার করছে না।

বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘বাসে আগুন দেওয়ার মামলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে থেকেও আসামি করা হয়েছে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নূরুল ইসলাম নয়ন ও আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলসহ বেশ কয়েকজনকে। আবার পঙ্গুত্ব বরণ করে দীর্ঘদিন বাসায় থেকেও বাস পোড়ানো মামলার আসামি হয়েছেন যুবদলের সহসভাপতি জাকারিয়া মঞ্জুর। যুবদলের আরেক সহসভাপতি জাকির হোসেন সিদ্দিকীও বেশ কয়েক দিন আগে পুলিশি হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থেকেও বাসে আগুনের মামলার আসামি হয়েছেন। সরকার পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে ধ্বংস করতে চায়।’

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, সর্বশেষ ঢাকা-১৬ উপনির্বাচনের আগে ও পরে ১৬টি মামলা দায়ের হয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ১ হাজার ৪৭৮ জন। সব মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা অভিযোগে মামলা। ন্যায়বিচার পেলে এসব মামলা আদালতে টিকবে না।’ ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের দিন আমি ভোট নিয়ে দিনভর ব্যস্ত ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় গাড়ি পোড়ানোর মামলা দেওয়া হয়েছে। উত্তরা এলাকায় সাতটি মামলায় ৪৫৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। নতুন করে আমার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়েছে। সবগুলো মামলায় আমাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে থেকেও প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনসহ আরও কয়েকজন আসামি হয়েছেন। এভাবে হয়রানি করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *