আন্দোলন নিয়ে সতর্ক পুলিশ

সহপাঠীদের মৃত্যুর প্রতিবাদে এবং সড়কে স্বাভাবিক শৃঙ্খলা ফেরার দাবিতে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সারা দেশে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন যাতে কোনোভাবেই সহিংসতায় রূপ না নেয় এবং এর পেছনে যাতে কেউ কলকাঠি নাড়তে না পারে সেদিকে তারা নজরদারি রেখেছে। শিক্ষার্থীদের অতীতের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা সামনে রেখে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঠে কাজ করছে মাঠ পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আন্দোলনে সতর্কতা নিয়ে ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সব জেলার এসপিদের বিভিন্ন ফরম্যাটে বার্তা পাঠানো হয়েছে। আন্দোলনের মাঠে থাকা শিক্ষার্থীদের ফুটেজ সংগ্রহের করার পাশাপাশি তারা কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েন এবং তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন ধরনের তথ্য আপলোড করা হচ্ছে তা নজরদারি রাখছে পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ বন্ধ করার পাশাপাশি তাদের সড়কে কোনো ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ আর দেয়া হবে না। পুলিশের অভিমত যে, ট্রাফিক পুলিশের কাজ শিক্ষার্থীরা করার কারণে সড়কে যানজট বাড়ার পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। এছাড়াও ঢাকায় রামপুরায় বাসে আগুন দেয়ার ঘটনার পর আরও বেশি নড়েচড়ে বসে আইন শৃঙ্খলা। ওই এলাকার ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াও সেখানে কোনো সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ ছিল কি-না তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, এই আন্দোলন সম্পন্ন শান্তিপূর্ণ ও অহিংস। কিন্তু, যদি শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনার ঘটে তাহলে কোনো ধরনের ছাড় দেবে না তারা।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন এবং মিডিয়া ও প্ল্যানিং) মো. হায়দার আলী খান গতকাল মানবজমিনকে জানান, ‘পুলিশের কাজ শৃঙ্খলা রক্ষা করা। শিক্ষার্থীরা যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে তার বাস্তবায়ন পুলিশের কাজ নয়। এটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে।
তিনি আরও জানান, আমাদের বিশ্বাস এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও অরাজনৈতিক। তবে আন্দোলনের মধ্যে রামপুরায় বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমরা বিষয়টি অনেক গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের সহিংসতাকে ছাড় দেয়া হবে না। তাদের পুলিশ কঠোর হস্তে দমন করবে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলার এসপি জায়েদুল আলম জানান, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আমাদের নজরদারি রয়েছে। কারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত তা আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী বিভাগের এক এসপি গতকাল সন্ধ্যায় জানান, ‘তার এলাকায় এখনও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গড়ে উঠেনি। তবে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আছেন।’
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা শুধু চলতি এই বছর নিরাপদ সড়ক নিয়ে আন্দোলন করছে না। এর আগেও রাজধানীর রমিজ উদ্দিন স্কুলের শিক্ষার্থী নিহতের পর ঢাকাসহ তারা সারা দেশে আন্দোলন গড়ে তোলে। ওই সময় ধানমন্ডিসহ একাধিক এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এতে সারা দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আগের বিষয়টির অভিজ্ঞতা সামনে রেখে কাজ করছে মাঠ পর্যায়ের পুলিশের কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, আগে থেকেই কোনো জায়গায় যাতে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করতে না পারে সেজন্য সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা নজরদারি বাড়িয়েছেন। এইসব আন্দোলনে কোনো রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অংশগ্রহণকারীরা কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও তাদের কার কার সঙ্গে যোগাযোগ আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *