অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পক্ষে হংকং

মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে এবং অর্থনীতি চাঙ্গায় বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাইছে হংকং। গতকাল বার্ষিক এক পলিসি বক্তৃতায় হংকংয়ের শীর্ষ নির্বাহী ক্যারি লাম এমন বার্তা দেন। খবর ব্লুমবার্গ।

বুধবারের বক্তৃতায় মূল ভূখণ্ড চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো মজবুত করতে গৃহীত নতুন পদক্ষেপের কথা জানান। বেইজিংয়ে কমিউনিস্ট নেতাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করার জন্য কিছুটা বিলম্বে শুরু হয়েছিল এবারের পলিসি বক্তৃতা। লাম তার বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেন, আরেকটি উত্তাল বছরের পর তার প্রশাসনের লক্ষ হচ্ছে আস্থা ফিরিয়ে আনা। এমন সময়ে লাম তার পলিসি বক্তৃতা রাখলেন, যখন হংকংয়ে দ্বিতীয় দফায় কভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়েছে, অর্থনীতি সংকুচিত হচ্ছে। তার সঙ্গে রয়েছে দীর্ঘদিনের সম্পদের বৈষম্য এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা।

বক্তৃতার শুরুতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের হংকং রূপকল্পের কথা উল্লেখ করে লাম বলেন, এবারের পলিসি বক্তৃতার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে কীভাবে চলমান অচলাবস্থা থেকে হংকংয়ের উত্তরণ ঘটানো যায় এবং যত শিগগির সম্ভব মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়।

লাম জোর দিয়ে বলেন, মূল ভূখণ্ড চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থেকে উপকৃত হতে পারে হংকংয়ের অর্থনীতি। কেন্দ্র সরকারের এক দেশ দুই ব্যবস্থা নীতি থেকেও সুবিধা পেতে পারে। চীনের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্কের মাধ্যমেই শহরটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন নতুন গতি পাবে। ২ ঘণ্টাব্যাপী লামের বক্তৃতার সময় হ্যাং সেং সূচক ১ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তার বক্তৃতার বড় একটি অংশে ‘বৃহত্তর উপকূলীয় অঞ্চল’ ধারণা নিয়ে কথা বলেছেন। এ পরিকল্পনার আওতায় হংকংয়ের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিকটস্থ মূল ভূখণ্ডের শহর গোয়াংঝু ও শেনজেনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। হংকংয়ের তরুণদের মূল ভূখণ্ড চীনের কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোয় বেতন-ভর্তুকির কথা উঠে এসেছে। তবে হংকংয়ে অনেক সমালোচক বলছেন, সাবেক ব্রিটিশ এ কলোনির স্বায়ত্তশাসন আরো সংকুচিত করার জন্য এমন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। গণতন্ত্রের দাবিতে অংশগ্রহণকারীসহ হংকংয়ের অনেক তরুণ বলছেন, তারা কম বেতনে মূল ভূখণ্ড চীনে চাকরি করতে আগ্রহী নন এবং সেখানে ভ্রমণ করে সীমান্তে আটক হওয়ার ঝুঁকি গ্রহণ করতে পারেন না।

বক্তৃতায় বড় কোনো প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দেননি লাম, যা অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতে জরুরি হিসেবে দেখা দিয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলে উঠতে চলতি বছর এরই মধ্যে ৩১ হাজার কোটি হংকং ডলার বা ৪ হাজার কোটি ডলার সরবরাহ করেছে নগর কর্তৃপক্ষ। লাম এর আগে বলেছিলেন, কঠিন আর্থিক পরিস্থিতির মানে হচ্ছে আরো অধিক প্রণোদনা প্যাকেজ সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়া।

নতুন করে কভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি অর্থনীতিতে আরেকটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ পূর্বাভাসে চলতি বছরে বাণিজ্য নগরীটির অর্থনীতি ৬ দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হবে। মঙ্গলবার থেকে সব ধরনের দোকানপাট, নাইট ক্লাব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ার সময়সীমা সংকোচন করা হয়েছে। নয়া এ সংক্রমণের ফলে হংকং-সিঙ্গাপুরের মধ্যে ঝক্কি-ঝামেলাবিহীন যে ভ্রমণের কথা ছিল, তা পিছিয়ে নেয়া হয়েছে।

টানা ছয়দিন ধরে হংকংয়ে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার দুই অংকের বেশি ছিল। সাম্প্রতিক উপাত্তে হংকংয়ের অর্থনীতির জন্য মিশ্র পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরে রফতানি বাড়ার পর অক্টোবরে তা কমেছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *