অডিটরের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের পরও ফল প্রকাশ, সামাজিক মাধ্যমে যা যা বলা হচ্ছে

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৮: ০১ অ+অ-

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে ১০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর দুই দিন পর এ পদের এমসিকিউ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ হাজার ২০৭ জন। রোববার প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়।

‘অডিটর পরীক্ষা: প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের পরও ফল প্রকাশ’ শিরোনামে প্রথম আলোতে খবর প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। প্রথম আলোর ফেসবুকে পাতায় সেসব পাঠকের কিছু মন্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো।বিজ্ঞাপন

<

বিজ্ঞাপন

মাহমুদুল হাসান একজন লিখেছেন, ‘দুর্নীতির সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে দেশ, শুধু শুধু পরীক্ষার নামে বেকারদের নিয়ে তামাশা চলছে।’ রবিউল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কোন পদে কত টাকা হলে চাকরি হবে, তা উল্লেখ করে দিলে আমাদের মতো বেকারদের জন্য ভালো হয়।’

আল আমিনের ভাষ্য, ‘সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন, প্রমাণসহ প্রশ্ন ফাঁসকারীরা গ্রেপ্তার, অতিদ্রুত রেজাল্ট। পরীক্ষা বাতিল না করে নিয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এগুলো কিসের ইঙ্গিত বহন করে।’

আরিফুল ইসলাম সরকার নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘দেশের সরকারি চাকরির বাজারটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে দুর্নীতিবাজেরা। দুর্নীতির যত প্রমাণই থাকুক না কেন, কোনো লাভ নেই। মনে হচ্ছে সরকার বলে এ দেশে কিছুই কাজ করছে না।’
গোপাল দাস নামের একজন লিখেছেন, ‘যদি এভাবেই নেবেন, তবে সাধারণ শিক্ষার্থীর টাকা মারেন কেন? কেন সার্কুলার দেওয়া হয়।’বিজ্ঞাপন

আশরাফ আলী লিখেছেন, ‘আগে মুরুব্বিরা বলত, বেশি লেখাপড়া করে যে ভালো চাকরি পায় সে। আর এখন বেশি তদবির করে যে ভালো চাকরি করে সে।’ ‘দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পরও ফল প্রকাশ করা হয় কীভাবে। অদ্ভুত, বেকারদের সাথে প্রতারণার শামিল’, বলেছেন শেখ সালমান কবির।

মিঠুন বাওয়ালি লিখেছেন, ‘সরকার বলে দিক টাকা ছাড়া চাকরি হবে না।’
প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ও সময় পরে প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের ওয়েবসাইট এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে। মৌখিক পরীক্ষার জন্য আলাদা কোনো প্রবেশপত্র দেওয়া হবে না। এমসিকিউ পরীক্ষার প্রবেশপত্রই মৌখিক পরীক্ষার জন্য বিবেচিত হবে।

‘অডিটর’ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস

ডিবি সূত্র জানায়, প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে ৫৫০টি অডিটর পদে নিয়োগের জন্য ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হয় গত শুক্রবার। অসদুপায় অবলম্বন করে কিছু চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন, এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে কাকরাইলের একটি আবাসিক হোটেল থেকে গত শুক্রবার বিকেলে দুই পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার বিজি প্রেস উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র ও কাফরুলের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই মূল হোতা মাহবুবা নাসরিন, মাহমুদুল হাসানসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে পাঁচটি ব্যাংকের চেক, ৭টি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ১০টি স্মার্টফোন, ১৮টি প্রবেশপত্র, ২ লাখ টাকা এবং ফাঁস হওয়া তিন সেট প্রশ্নপত্র জব্দ করা হয়।

ডিবির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কীভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়েছে, সেটা মহাহিসাব নিরীক্ষকের মহাপরিচালকে অবহিত করা হয়েছে। পরীক্ষা বাতিল করা বা পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।

শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিনসহ চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার্থী সেজে কেন্দ্রে ডিজিটাল ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করেন। পরীক্ষার হল থেকে ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্ন বাইরে পাঠানো হয়। বাইরে থাকা চক্রের সদস্যরা প্রশ্ন দ্রুত সমাধান করে আবার পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠান। এভাবেই প্রশ্ন ফাঁস করে এমসিকিউ পরীক্ষায় পাস করানো হয় চাকরিপ্রার্থীদের। পরে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ১৬ লাখ টাকা চুক্তি করা হয়। দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা অগ্রিম হিসেবে নেন চক্রের সদস্যরা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *