১০ মাসেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে দেশীয় চা উৎপাদন

করোনাকালে চা শিল্পের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়েছিল বাগানগুলোয়। সে সুফল মিলেছে উৎপাদনে। বছরের দুই মাস হাতে রেখেই এবার বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। বাগান সম্প্রসারণ, নতুন করে বিনিয়োগ এবং বাগান উন্নয়নে বাগান মালিকদের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে চা উৎপাদন বাড়ছে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্টরা। তবে বাজারে চায়ের দাম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন অনেকে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর দেশের বাগানগুলো থেকে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার কেজি। অক্টোবর পর্যন্ত উৎপাদন হয় ৭ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার কেজি। গত বছর একই সময়ে উৎপাদন হয়েছিল ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৩৮ হাজার কেজি। অনুকূল আবহাওয়া ও বাগান পরিচর্যাসহ কার্যকর ব্যবস্থাপনার কারণে দুই মাস (নভেম্বর, ডিসেম্বর) হাতে রেখেই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে বাগানগুলো।

গত বছর দেশে চা উৎপাদন হয়েছিল ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার কেজি। এবার গত বছরের উৎপাদন ছাড়িয়ে যাবে কিনা তা জানা যাবে নভেম্বর ও ডিসেম্বরের প্রতিবেদন প্রকাশের পর।

এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ১৬৭টি বাগানে ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়, যা দেশের ইতিহাসে ছিল সর্বোচ্চ উৎপাদন। উৎপাদনের এ ধারা অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বছরে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের তালিকায় স্থান করে নেবে বলে আশা করছে চা বোর্ড।

লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত চা উৎপাদনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশীয় চা সংসদ সিলেট অঞ্চলের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, চা উৎপাদন বাড়াতে বাগান মালিকরা বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়েছেন। বছরের শুরুতে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে চায়ের উৎপাদন কিছুটা কম ছিল। তবে বছরের শেষ দিকে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন বাড়ে। জুন থেকে পর্যায়ক্রমে উৎপাদন বাড়তে থাকে। অক্টোবরে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৪৫ লাখ ৭৮ হাজার কেজি উৎপাদন হয়। তবে ডিসেম্বরে শীতের প্রকোপ থাকায় চা উৎপাদন স্বাভাবিকভাবেই কমে যায় বলে জানান তিনি।

চা বোর্ডের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার কেজি, উৎপাদন হয়েছিল ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার কেজি। ২০১৯ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি ৪১ লাখ ৪০ হাজার কেজি। উৎপাদন হয় ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার কেজি। ২০১৮ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি। উৎপাদন হয় ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার কেজি।

বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাগান মালিকরা এখন পুরনো চারা উঠিয়ে নতুন চারা আবাদ করছেন। এমনকি পরিত্যক্ত জমিও চা চাষের আওতায় নিয়ে এসেছেন। উৎপাদন বাড়াতে বাগান মালিকদের বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। বাগান উন্নয়নে অধিকাংশ মালিক বিনিয়োগ করছেন বলে জানান কমলগঞ্জের শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানের স্বত্বাধিকারী মহসীন মিয়া মধু।

তিনি বলেন, করোনা মহামারী এবং কিছুটা প্রতিকূল আবহাওয়ার মাঝেও এবার চা উৎপাদন ভালো হয়েছে। কয়েক বছর থেকেই উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। চা উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও বেড়েছে। চা বোর্ড থেকে তদারকি করা হচ্ছে। উন্নত মানের চা উৎপাদনে খরচ বেশি হয়। কিন্তু বাজারে নিম্নমানের চা বেশি থাকায় উন্নত মানের চায়ের উপযুক্ত দাম মিলছে না।

চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানের মাধ্যমে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে চা বোর্ডের নিবন্ধিত ১৬৭টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯১টি, হবিগঞ্জে ২৫টি, সিলেটে ১৯টি, চট্টগ্রামে ২২টি, পঞ্চগড়ে ৭টি, রাঙ্গামাটিতে ২টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে একটি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে মোট জমির পরিমাণ ২ লাখ ৭৯ হাজার ৪৩৯ একর।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *