সিংহাসন, রাজপ্রাসাদ ছেড়ে পালালেন কেন আশরাফ গণি!

১৫ই আগস্ট। রাজধানী কাবুলে রাজপ্রাসাদে তখনও প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি ও তার স্ত্রী। তখনও তালেবানরা কাবুলের ভিতরে প্রবেশ করেনি। কোনো আক্রমণও করেনি। কিন্তু আকস্মিক সিংহাসন ছেড়ে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আফগানিস্তানের তখনকার প্রসিডেন্ট আশরাফ গণি। কিন্তু কেন? অনলাইন ভয়েস অব আমেরিকাকে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, তালেবানরা দেশ দখল করেছে। এ অবস্থায় রাজধানী কাবুলের রাজপথে রক্তপাত এড়াতে তিনি পালিয়ে গিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। দেশ ছাড়ার সময় তিনি সঙ্গে বিপুল পরিমাণ সরকারি তহবিলের অর্থ নিয়ে যান বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

এ অভিযোগ জোর দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন আশরাফ গণি।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ১৯৯০এর দশকে গৃহযুদ্ধ দেখা দিয়েছিল। তখন সড়কে সড়কে ভয়াবহ লড়াই হয়েছিল। সেই একই অবস্থার ঝুঁকি আবার সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমাকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নিরাপত্তা রক্ষায় তা ছেড়ে যেতে। কিন্তু কাবুল ছেড়ে আসা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত। আমি বিশ্বাস করি, বন্দুকের গুলিকে নীরব করে দিতে, কাবুল এবং সেখানকার ৬০ লাখ নাগরিককে রক্ষার এটাই ছিল একমাত্র উপায়।
আশরাফ গণির বয়স এখন ৭২ বছর। আফগানিস্তানে একটি গণতান্ত্রিক সরকার সৃষ্টি করতে ২০ বছর ধরে কাজ করেছেন তিনি। স্বীকার করেন, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কয়েক দশক ধরে আফগানিস্তানের অন্য সরকারগুলোর অর্জনও তাই। ওদিকে আশরাফ গণিকে মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়ার কথা জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আশরাফ গণি বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে ১৫ই আগস্ট আকস্মিকভাবে দেশ ত্যাগের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবো। কিন্তু এখন আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে যে, আমি কাবুল ত্যাগ করার সময় জনগণের লাখ লাখ ডলার সঙ্গে নিয়ে এসেছি।
রাশিয়ার বার্তা সংস্থা রিয়া রিপোর্ট করেছিল, তিনি কাবুল ত্যাগের সময় সঙ্গে করে নিয়েছেন চার গাড়ি ও একটি হেলিকপ্টার ভর্তি নগদ অর্থ। কিছু অর্থ স্থানাভাবে ফেলে গিয়েছেন বলেও বলা হয় তাতে। অন্য বার্তা সংস্থাগুলোর রিপোর্টে বলা হয়, সরকারের তহবিল থেকে তিনি ১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার নিয়ে গিয়েছেন। এমন অভিযোগ করেছেন তাজিকিস্তানে নিয়োজিত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত। এসব অভিযোগের জবাবে আশরাফ গণি বলেছেন, এসব অভিযোগ পুরোপুরি এবং সর্বোত মিথ্যা।
তিনি বলেছেন, ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চলছেন তিনি এবং তার স্ত্রী। এক্ষেত্রে তারা নীতি বিসর্জন দেননি। এ ছাড়া তিনি নিজের সব সম্পদ সম্পর্কে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, জাতিসংঘকে তার নিজের আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করতে অথবা অন্য কোনো নিরপেক্ষ অডিটকে স্বাগত জানাবেন। ওদিকে আফগানিস্তানের টোলো নিউজ চ্যানেল একটি ভিডিও ক্লিপ প্রচার করে। বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সাক্ষাৎকার প্রচারের ঘোষণা দেয়া হয় এতে। এতে ব্লিনকেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- দেশ থেকে পালাতে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণিকে কি আপনি সাহায্য করেছিলেন? জবাবে ব্লিনকেন বলেছেন, তিনি দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগের রাতে আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। জানিয়েছিলেন যে, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত লড়াই করে যেতে প্রস্তুত তিনি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *