সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় দুই নেতার

মৈত্রী দিবসে পারস্পরিক বার্তা আদান-প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দিল্লিতে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, আমি আত্মবিশ্বাসী আমাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে আগামী কয়েক দশক দুই দেশ এবং দেশের জনগণ একত্রে চলবে। এদিকে এক টুইট বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ককে আরও প্রসারিত এবং গভীর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি উন্মুখ।’
সংযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনগণের পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়ানোর তাগিদ শেখ হাসিনার: মৈত্রী দিবস বা ফ্রেন্ডশিপ ডে উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রচারিত দুই মিনিটের ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের মধ্যে সংযুক্তি, ব্যবসা, বাণিজ্য এবং দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের ওপর মনোনিবেশ করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে কাজ করার জন্য পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, আমরা আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্বে বিশ্বাস করে চলেছি। একই সঙ্গে এই বর্ষপূর্তি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি এবং সামনের পথ চলা সম্পর্কে চিন্তা করার সুযোগ এনে দিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী গতিশীল অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য নিজেদের পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করার জন্য ও এটি একটি উপলক্ষ। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মূল বিষয় এখন জনগণের মধ্যে সংযুক্তি, বাণিজ্য, ব্যবসা ও যোগাযোগে মনোনিবেশ করা দরকার, যা উভয়পক্ষের জন্য পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে তিনি জানান। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স (আইসিডাব্লিউএ) ১৯৭১ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি প্রদান করার প্রেক্ষিতে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার নয়াদিল্লিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান এবং আইসিডাব্লিউএ মহাপরিচালক বিজয় ঠাকুর সিং অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, ২০২১ সালের ২৬ থেকে ২৭শে মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাষ্ট্রীয় সফরকালে আমরা ঢাকা ও নয়াদিল্লির পাশাপাশি নির্ধারিত ১৮টি শহরে যৌথ উদ্‌যাপনের বিষয়ে একমত হয়েছি এবং ৬ই ডিসেম্বরকে ‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে আজ (৬ই ডিসেম্বর) ঢাকা ও নয়াদিল্লিতে এবং বেলজিয়াম, কানাডা, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জাপান, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৮টি দেশে বন্ধুত্বের দিন পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্‌যাপন করছে। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যাত্রায় এটি একটি মাইলফলক। ভারত ১৯৭১ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী যে দুই দেশ এবং দেশের জনগোষ্ঠী একত্রে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ধারণাকে বাস্তবতায় পরিণত করে চলবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের অংশীদারিত্ব চুক্তি, সমঝোতা স্মারক, দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় যা আমাদের কাজের সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক কাঠামো প্রদান করে। আজ, আমাদের বিশাল অংশীদারিত্ব পরিপক্ব হয়েছে, গতিশীল, ব্যাপক এবং কৌশলগত আকার নিয়েছে এবং সার্বভৌমত্ব, সমতা, বিশ্বাস এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং অন্যান্য অগণিত অভিন্নতার যৌথ মূল্যবোধে পরিগণিত। তিনি বলেন, নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক মতবিনিময় ও আদান-প্রদান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন আরও শক্তিশালী, বৈচিত্র্যময় ও প্রসারিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে আরোপিত বিধিনিষেধ সত্ত্বেও সমস্ত স্তরে সম্পর্ক স্থিতিশীল এবং শক্তিশালী রয়েছে। তিনি অভিমত প্রকাশ করেন, কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় আমাদের চমৎকার সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততায় এটি স্পষ্ট ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর এক ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। সম্পর্কটি বন্ধুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব আমাদের হৃদয়ে রয়েছে। বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় এবং দীর্ঘস্থায়ী থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং তার সরকার, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং সামগ্রিকভাবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভারতের জনগণের উদারতার কথা স্মরণ করছি। তিনি বলেন, ভারত তখন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদান করেছে, মুজিবনগর সরকারের জন্য জায়গা দিয়েছে এবং বাংলাদেশের পক্ষে কূটনৈতিক প্রচারণা চালিয়েছে।
মোদির বার্তা: এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও প্রসারিত ও গভীর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুই দেশের ‘মৈত্রী দিবস’ উদ্‌যাপন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম টুইটারে দেয়া এক বার্তায় মোদি একথা বলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ১০ দিন আগে ৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত। স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী প্রথম দেশগুলোর মধ্যে ভারতও অন্যতম। মোদি বলেন, ‘আজ ভারত ও বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস পালন করছে। আমরা যৌথভাবে আমাদের ৫০ বছরের বন্ধুত্বকে স্মরণ করি এবং উদ্‌যাপন করছি। আমাদের সম্পর্ককে আরও প্রসারিত এবং গভীর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি উন্মুখ।’
ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভিসাযুক্ত যাতায়াতের আশা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর: ওদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদারে সরকার সচেষ্ট জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমি তো সেদিনের আশায় আছি, যেদিন ভারতসহ প্রতিবেশী দেশে আসা-যাওয়া করতে কোনো ভিসা লাগবে না। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বাধা থাকবে না। সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ৫০ বছর পূর্তিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ৭১’ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের যে রক্তের সম্পর্ক তা আরও গভীরভাবে উদ্‌যাপন করতে চাই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ভারত-পাকিস্তানের লড়াই নয় মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ইন্ডিয়া- পাকিস্তানের লড়াই নয়। এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ভারত সাহায্য করেছে স্বাধীন বাংলাদেশকে। তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ উদ্‌যাপনের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের সঙ্গেও কূটনীতির ৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করছি। এর জন্য দেশবাসীকেও ধন্যবাদ দিই, কেননা যে দল এ দেশে স্বাধীনতা নিয়ে এসেছিল, জাতি তাদের ভোট দিয়ে এই উদ্‌যাপনগুলো করার সুযোগ দিয়েছে। সংগঠনের কার্যনির্বাহী সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আপনের সভাপতিত্বে এবং ফোরামের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাবেক রাষ্ট্রদূত কামালউদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী বিক্রম দোরাইস্বামী এবং ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুইনসেল। এই দীর্ঘ আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব বিশিষ্ট সাংবাদিক হারুন হাবিব।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব, শান্তি, সহযোগিতা ও উন্নয়নের পারস্পরিক সম্পর্কের একটি নতুন মডেল সৃষ্টি হয়েছে। পারস্পরিক সম্পর্কের এই মডেল বিশ্বের অন্যান্য দেশও অনুসরণ করতে পারে। মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ভারতের মিত্রবাহিনীর সদস্যদের রক্তে আমাদের মাটি সিক্ত হয়েছে। সে কারণে ভারতের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া, যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধ করাসহ প্রথম একাত্তরের ৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ায় ভারতের কাছে আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে গত অর্ধশত বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক নানা চড়াই-উতরাইয়ের ভেতর দিয়ে এগিয়েছে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আলোচনার মাধ্যেম উভয় দেশের মধ্যে ছোট-বড় অনেক অস্বস্তিকর বিষয় মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। অর্থনীতি ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। শুধু ভারত ও ভুটান নয়, এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ ভারতের সেনাবাহিনী, কর্মকর্তা ও জনসাধারণের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। একইসঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, মুক্তিযুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে এই দেশের মানুষের জনযুদ্ধ ছিল বলেই ভারতের পক্ষে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছিল। যুদ্ধের এক বিশেষ মুহূর্তে আমাদের সবার মধ্যেই একটি গভীর প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল, ভারত কখন আমাদের স্বীকৃতি দেবে। এটা আমাদের জন্য খুবই জরুরি ছিল। উপযুক্ত সময়েই ভারতের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আমাদের স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেটি ছিল আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এখন সেই দিনটির সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্‌?যাপন করা আমাদের জন্য সৌভাগ্যেরও। বিশেষ অতিথি ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, আজকের এই দিনটি আমাদের উভয় দেশের জন্যই আনন্দের সঙ্গে উদ্‌?যাপন করার মতো একটি দিন। অনেকে বলতে চেয়েছেন ভারত পাকিস্তানকে ভাঙার জন্যই এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভারতের সেই উদ্দেশ্য ছিল না। প্রথমত, তথ্যপ্রমাণে এটা স্পষ্ট যে ২৫শে মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনারা এখানে গণহত্যা চালিয়েছিল। এক কোটির বেশি মানুষ জীবন রক্ষার জন্য ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই মানুষের অনেকেই বৃটিশ ভারতের বাসিন্দা ছিলেন। দেশ ভাগের পর তারা পাকিস্তানে চলে আসেন। তাদের অনেকেরই আত্মীয়স্বজন ভারতে থেকে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ এই দুই দেশের মানুষ কেবল প্রতিবেশীই নন, তাদের ভেতরের সম্পর্ক আরও গভীর, অভিন্ন। শুধু গণহত্যার কারণেই নয়, এই মানবিক সম্পর্কের কারণেও তাদের আশ্রয় দিতে হয়েছে, পাশে দাঁড়াতে হয়েছে। হাইকমিশনার বলেন, এখন নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। বিগত দিনে সম্পর্কে কিছু টানাপড়েন হয়েছে, কিন্তু অতীতের ঘটনাকে অতিক্রম করে সামনে তাকাতে হবে। আগামী প্রজন্মকে এই দুই দেশের সম্পর্ক আরও সম্মানজনক উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। অনুষ্ঠানে ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুইনসেল বলেন, বাংলাদেশ গত ৫০ বছরে অনেক এগিয়ে গেছে। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বও গভীর হয়েছে। ভবিষ্যতে এই বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বাড়বে। এই সম্পর্ক ও সহযোগিতা বহু বছর ধরে উদ্‌?যাপিত হতে থাকবে। তিনি শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে উভয় দেশের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের ভেতর দিয়ে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *