পানির ওপর ভাসছে মাটির আস্তরণ। পাশে ভাসছে ময়লার স্তূপ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন পানির ওপর চর জেগেছে। অথচ নিচে পা রাখলেই তলিয়ে যেতে হবে পানিতে। এমনভাবেই ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে মিরপুরের আনন্দ বাজার শাখা খাল।
দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পীরেরবাগ অংশে পুরো খালে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এমনকি পাড়েও পড়ে আছে ময়লা। একটি সাইনবোর্ডে লেখা, খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিষেধ। কিন্তু ঠিকই খালে ময়লা ফেলা হচ্ছে। এতে ময়লার স্তুপ জমেছে পানিতে। পানি চলাচল একেবারেই বন্ধ। আর কিছু দিন এভাবে চললে খালের অস্তিত্ব বলতেও কিছু থাকবে না বলে জানান স্থানীয়রা।
তারা জানান, আগে সিটি করপোরেশন মাঝে মাঝে একটু ময়লা নিয়ে খোঁচাখুঁচি করলেও এখন সব বন্ধ। কোনো ময়লাই পরিষ্কার করা হয় না। যার কারণে এখন সব জমে স্তূপ হয়ে গেছে। আগে এ খালে পানির স্বাভাবিক চলাচল ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা সলিম হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশনের লোকেরা ঠিকমতো রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করে না। খালের পাড়ে পড়ে থাকা ময়লা গাড়িতে না তুলে খালের দিকে আরেকটু ঠেলে দেয়। মানুষের সচেতনতার অভাবে এই খাল এখন মরার মতো অবস্থা। ঠিকমতো পানি চলাচল করতে পারে না। এছাড়া খালের দুই পাশ দখল হয়ে যাওয়ার কথাও বলেন এই বাসিন্দা। মিরপুরের এই শাখা খালটি শুধু নয়, মিরপুর এলাকার প্রায় সব কটি খালেরই একই দশা।
আগে রাজধানীর এসব খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ঢাকা ওয়াসাকে। ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশের পর থেকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছিল তারা। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ওয়াসা থেকে ২৬টি খাল ও একটি জলাশয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছ থেকে আরও ১৪টি খাল বুঝে পায় দুই সিটি করপোরেশন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে দুই সিটির মধ্যে ৬৯টি খালের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে এর মধ্যে অনেক খাল বিলীন। যেসব খালের অস্তিত্ব এখনো আছে, তার মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তত্ত্বাবধানে রয়েছে ২৯টি খাল ও একটি জলাশয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায় রয়েছে ২৫টি খাল।
দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই খাল উদ্ধারে মনোযোগী হয় দুই সিটি করপোরেশন। কিছু খাল উদ্ধার করে সেখানে পানি চলাচলের ব্যবস্থাও করে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করায় সেগুলোতেও এখন পানি চলাচল কমে গেছে। আবার আগের রূপে ফিরে যাচ্ছে।
তবে খাল পূর্বের রূপ ফিরিয়ে আনতে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে। এই কাজে অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম জানান, খালের সীমানা নির্ধারণে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সীমানা নির্ধারণের জন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের (সেনাবাহিনীর) সময় আছে। তারা আমাদের রিপোর্ট দেবে। পরে আমরা খাল উদ্ধারের কাজটা করব। আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি, যেন জনগণ খালে ময়লা না ফেলে।