মার্কিন নির্বাচনের আঁচ লেগেছে ইসরায়েলেও

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর বেশিদিন বাকি নেই। এ অবস্থায় যেখান থেকেই ভোট আসুক না কেন, তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই প্রার্থীর জন্য। ইসরায়েল এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা অনেকেই ফ্লোরিডা ও পেনসিলভানিয়ার মতো সুইং স্টেটের ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত। ৩ নভেম্বরের ভোটে কে শেষ হাসি হাসবেন, তা নির্ধারণে এসব ভোটার নিয়ামক হয়ে দাঁড়াতে পারেন। খবর রয়টার্স।

চলতি সপ্তাহে তেল আবিবের রাস্তায় হঠাৎ করেই বেশ কয়েকটি মিনিবাসের আবির্ভাব হয়েছে, যেগুলোর গায়ে হিব্রু ভাষায় লেখা পোস্টার সাঁটানো রয়েছে। পোস্টারগুলোয় লেখা রয়েছে—‘ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানানো উচিত আপনাদের’।

শুধু যে রিপাবলিকান সমর্থকরাই ইসরায়েলে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন, তা নয়। ডেমোক্রেটিক পার্টিও আমেরিকান-ইসরায়েলিদের কথা মাথায় রেখে নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। যেসব ভোটারের হোম স্টেটে ডাকযোগে ব্যালট পাঠানোর সুযোগ রয়েছে, তাদের জন্য ডিএইচএল কুরিয়ার সার্ভিসে ৪০ শতাংশ ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা করে দিয়েছে তারা।

ঠিক কী পরিমাণ আমেরিকান-ইসরায়েলি ভোটার আসন্ন নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, সে বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান এখনো পাওয়া যায়নি। তবে রিপাবলিকানস ওভারসিজ ইসরায়েলের চেয়ারম্যান মার্ক জেলের ধারণা, দেশটিতে এ মুহূর্তে অন্তত ২৫-৩০ হাজার আমেরিকান-ইসরায়েলি রয়েছেন, যারা ফ্লোরিডার নিবন্ধিত ভোটার। জেল বলেছেন, ‘রাজ্যটিতে ফলাফল নির্ধারণে তারা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হয়ে দাঁড়াতে পারেন।’ এ সময় তিনি ২০০০ সালের নির্বাচনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ফ্লোরিডা জয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। ওই নির্বাচনে রাজ্যটিতে সামান্য ব্যবধানে জিতেছিলেন বুশ।

রিপাবলিকান প্রার্থী ও বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে ইসরায়েলে। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া ও তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস সেখানে স্থানান্তর করায় অনেক ইসরায়েলিকেই তুষ্ট করেছেন ট্রাম্প।

এদিকে ডেমোক্রেটিক দলকে সমর্থন করেন—এমন অর্ধেকের বেশি আমেরিকান-ইসরায়েলি যুক্তরাজ্যের সুইং স্টেটগুলোর ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত বলে পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এসব ভোটারকে ভোট প্রদানে উদ্বুদ্ধ করতে তাদের কাছে নির্বাচনী পোস্টকার্ড পাঠিয়েছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের অনুসারীরা।

ডেমোক্র্যাটস অ্যাব্রোড ইসরায়েলের চেয়ারম্যান হিথার স্টোন রয়টার্সকে বলেন, ‘ট্রাম্প আসলে ইসরায়েলকে ব্যবহার করে নিজের রাজত্ব বাঁচাতে চাইছেন। অন্যদিকে বাইডেন ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ বন্ধে যে দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের রূপকল্প তৈরি করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে বাইডেন সহায়তা করতে পারবেন।’

উভয় পার্টির পক্ষ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, ইসরায়েলে বসবাসরত এমন দ্বৈত নাগরিকত্বধারীর সংখ্যা এক-তিন লাখের মধ্যে। আর কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এ সংখ্যা আড়াই লাখের বেশি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে ছয়জন আমেরিকান-ইসরায়েলি ভোটারের সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছিল। তারা বলেছেন, নভেল করোনাভাইরাস সংকট, অর্থনৈতিক নীতি ও ইসরায়েলের বিষয়ে প্রার্থীদের অবস্থান তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

গত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন, যেখানে ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *