বোরোতে ২ লবণসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন

দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ অঞ্চলই এখন লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এসব অঞ্চলে চাষ উপযোগী লবণসহিষ্ণু ধানের জাত থাকলেও এখন অনেকটাই অকার্যকর। তাই এ অঞ্চলের আবাদ উপযোগী দুটি বোরো ধানের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। এছাড়া আউশ মৌসুমের জন্য একটি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত এ জাত তিনটি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড (এনএসবি)।

গতকাল এনএসবির ১০৩তম সভায় বোরো মৌসুমের জন্য দুটি জাত ও আউশ মৌসুমের জন্য একটি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আউশ মৌসুমের জন্য ব্রি ধান-৯৮ এবং বোরো মৌসুমের জন্য ব্রি ধান-৯৭ ও ব্রি ধান-৯৯ নামে ছাড়করণ করা হয়েছে। দেশের উপকূলীয় লবণাক্ততা অঞ্চলের জন্য ও অনুকূল পরিবেশে আবাদের জন্য এবং ব্রি ধান-৯৮ সারা দেশে আউশ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। ফলে ব্রি উদ্ভাবিত মোট ধান জাতের সংখ্যা হলো ১০৫।

ব্রি ধান-৯৮ আউশ মৌসুমে চাষ উপযোগী জাত। এর ফলন প্রতি হেক্টরে ৫ দশমিক শূন্য ৯ থেকে ৫ দশমিক ৮৭। এর দানা লম্বা ও চিকন। এ জাতের ধানের দানার রঙ সোনালি। জাতটির জীবনকাল ১১২ দিন, যা রোপা আউশ মৌসুমের জাত বিআর-২৬-এর সমান। এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২২ দশমিক ৬ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭ দশমিক ৯ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৯ দশমিক ৫ ভাগ। ভাত ঝরঝরে। কৌলিক সারিটির জীবনকাল বিআর-২৬-এর মতো এবং ফলন বেশি হওয়ায় প্রস্তাবিত জাত হিসেবে নির্বাচিত হয়।

ব্রি ধান-৯৭ ও ব্রি ধান-৯৯ বোরো মৌসুমের উচ্চফলনশীল লবণাক্ততা সহনশীল ধানের জাত। এ জাতগুলো চারা অবস্থায় ১৪ ডিএস/মি এবং সমগ্র জীবনকাল ৮-১০ ডিএস/মি লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। ব্রি ধান-৯৭-এর গড় জীবনকাল ১৫২ দিন এবং গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৯ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টরপ্রতি সাত টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২৫ দশমিক ৫ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৫ দশমিক ২ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮ দশমিক ৬ ভাগ। গাছের গড় উচ্চতা ১০০ সেন্টিমিটার ও ডিগপাতা খাড়া। এর চাল মাঝারি মোটা হওয়ায় বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর ও খুলনা অঞ্চলে অধিক জনপ্রিয় হবে।

ব্রি ধান-৯৯-এর গড় জীবনকাল ১৫৫ দিন এবং গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৫ দশমিক ৪ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ৭ দশমিক ১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২২ দশমিক ৮ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭ দশমিক ১ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৭ দশমিক ৯ ভাগ। গাছের গড় উচ্চতা ৯৪ সেন্টিমিটার ও ডিগপাতা খাড়া। এর চাল লম্বা ও চিকন হওয়ায় সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে অধিক জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ জাতের কৌলিক সারিগুলো লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি ধান-৬৭-এর থেকে ফলন বেশি হওয়ায় প্রস্তাবিত জাত হিসেবে নির্বাচিত হয়। এরপর জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল বোরো ২০১৮-১৯ মৌসুমে কৃষকের মাঠে প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। কৃষকের মাঠে ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় বোরো মৌসুমের জন্য লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি ধান-৬৭-এর পরিপূরক জাত হিসেবে এ জাত দুটি অবমুক্ত করা হয়।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *