দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নওগাঁয় বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। হাঁড়কাপানো শীতে বিপাকে পড়েছে এই জনপদের মানুষ। আজ শনিবার (৭ ডিসেম্বর) নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালে কুয়াশার পরিমাণ কমে রোদের দেখা মিললেও উত্তরের হিমেল বাতাস অব্যাহত থাকায় শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে।
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের উচ্চ পর্যবেক্ষক হামিদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আজ সকাল ৯টার দিকে বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি আজকে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। চলতি মৌসুমেও এখন পর্যন্ত এটিই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড। এর আগে গত বৃহস্পতিবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চলতি মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নওগাঁয় গতকাল শুক্রবার ও গত বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
Advertisement
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আর তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি উত্তর থেকে আসা হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় নওগাঁয় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শীতের কারণে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে।
Advertisement
Advertisement
আজ সকালে শহরের বিজিবি ব্রিজ এলাকায় কথা হয় ভ্যানচালক আব্দুল মালেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকাল সকাল রোদ উঠেছি। কিন্তু কনকনা বাতাসের কারণে খুব ঠান্ডা লাগোছে। ঠান্ডাত হাত-পা জড়ো হয়ে যাছে। এমন ঠান্ডাত ল্যাপ গাওত দিয়ে শুয়ে থাকলে ভালো লাগতো। কিন্তু প্যাটত খিদা থাকলে কি আর বাড়িত আরামে থাকা যায়।’
এদিকে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৬০ শিশু ভর্তি ছিল। গত কয়েক দিনে সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শয্যাসংকটের কারণে কোনো কোনো বেডে দুই শিশুকে রাখা হয়েছে। অনেক রোগীকে ওয়ার্ড ও করিডোরের মেঝেতে জায়গা দিতে হয়েছে।
Advertisement
শীত বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল ইসলাম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল জানান, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়কে নওগাঁ শীতার্ত মানুষের জন্য গরম কাপড় বরাদ্দ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু আজ শনিবার পর্যন্ত নওগাঁ সরকারিভাবে কোন গরম খবর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। একটি বেসরকারি সংস্থা বিতরণের জন্য আজ পর্যন্ত ৪০০টি কম্বল জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছে।
Advertisement
জেলা প্রশাসক আরও জানান, গতবছর তিন ধাপে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় থেকে নওগাঁতে ৭৬ হাজার গরম কাপড় অসহায় ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে বিতরণ করার জন্য সরকারিভাবে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবছর এখনো পর্যন্ত সরকারিভাবে অসহায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য কোন গরম কাপড় বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।