দেড় দশকেও পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হয়নি জবি শিক্ষার্থীদের

প্রতিষ্ঠার দেড় দশকেও আধুনিক মেডিকেল সেন্টার তৈরি হয়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি)। ফলে দেশের অন্যতম সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা থেকে।
[৩] করোনার প্রকোপ বাড়লে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গতবছরের ডিসেম্বর থেকে পুরনো মেডিকেল সেন্টার স্থানান্তর করে ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আধুনিক সরঞ্জামাদি সহ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত আধুনিক সরঞ্জামাদি ছাড়াই তড়িঘড়ি করে উদ্ধোধন করা হয় নতুন মেডিকেল সেন্টারটি।
[৪] নতুন মেডিকেল সেন্টারের নাম “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক মেডিকেল সেন্টার” দেওয়া হলেও কার্যত আধুনিক কোন কিছুই নেই এখানে।পাশাপাশি চলে ডাক্তারের অনিয়ম। সময়মতো অফিসে না আসা এবং অফিসের নির্ধারিত সময় শেষ হবার আগে চলে যাওয়াই তাদের নিয়মে পরিণত হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা সঠিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।
[৫] জানা যায়, পুরনো মেডিকেল সেন্টারটির অবস্থা ছিল আরও নাজুক। সেখানে নাপা,প্যারাসিটামল ও ঠান্ডার ঔষধ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যেতো না।ছিলনা আধুনিক কোন সরঞ্জাম। জীর্ণ মেডিকেল সেন্টারটি উন্নয়নের জন্য কয়েক দফা আন্দোলন ও অনশন করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে মেডিকেল সেন্টার আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
[৬] সরেজমিনে দেখা যায়,নতুন মেডিকেল সেন্টারটিতে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কয়েকটি উপকরণ থাকলেও রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি কক্ষ, প্যাথলজি ল্যাব, আইসিইউ নেই। গত বাজেটে এসব আধুনিক যন্ত্রাদি কেনার বাজেট থাকলেও সেই টাকা ইউজিসিতে ফেরত গেছে। মেডিকেল সেন্টারটিতে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে মাত্র একজন ডাক্তার। মেডিকেল সেন্টার পরিচালনায় তিনজন ডাক্তার নিয়োগ দিলেও দুজন ডাক্তার নিয়মিত আসেন না। এতে বর্তমান কর্মরত ডাক্তার ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
[৭] এ বিষয়ে উপ-প্রধান চিকিৎসক মিতা শবনম বলেন, ২০ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু আমিই একা আছি ডাক্তার হিসাবে। মাঝে মাঝে রোগীর চাপ এত থাকে যে, একা হিমশিম খেতে হয়। অন্যদিকে চিকিৎসা নিতে আসা শিক্ষার্থীরাও পড়েন ভোগান্তিতে। বাকি দুইজন ডাক্তার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অন্য দুইজন ডাক্তার নিয়োগ প্রাপ্ত হলেও উনারা অফিসে নিয়মিত আসেনা। সব কিছু আমাকেই করতে হয়।
[৮] জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যাধুনিক এই মেডিকেল সেন্টারটি শুধুমাত্র নামে অত্যাধুনিক নয় বরং কাজেও অত্যাধুনিক করে বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহনের সেন্টার স্থাপনের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
[৯] জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র একটি মেডিকেল আছে। যেখানে চিকিৎসক এবং সেবা দুটোরই মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২০ হাজার শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অনেক শিক্ষক- কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।আকস্মিক কোন সমস্যা হলে দ্রুত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা ছাড়াও শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণের সেন্টার করা সময়ের দাবি।
[১০] বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদদের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান জাহিন বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে মেডিকেল সেন্টারের উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসের সাথে বাস্তবতার বিশাল ফারাক রয়েছে। কেবলমাত্র আয়তন বৃদ্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ হাজার শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য এই মেডিকেল সেন্টারটি মোটেই প্রস্তুত নয়। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, চিকিৎসা সরঞ্জাম, জরুরী পরিস্থিতির জন্য পর্যাপ্ত সেবা ছাড়া এই মেডিকেল সেন্টার একটি নখদন্তহীন বাঘ ছাড়া কিছু না। আমরা ইতিমধ্যেই দাবি জানিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগেই এই মেডিকেল সেন্টারে পিসিআর ল্যাব, কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন কেন্দ্র স্থাপন করতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সে অনুযায়ী আমাদের আশ্বাস জানিয়েছিলো।
[১১] সাত দফা আন্দোলনের সমন্বয়ক তৌসিব মাহমুদ সোহান বলেন,আমাদের যে মেডিকেল সেন্টার আছে সেটা নামেমাত্র মেডিকেল সেন্টার ছাড়া কিছুই না।এখানে নাপা-প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না।মেডিকেল সেন্টারের এমন দূদর্শার সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।এর আগে আরও কয়েকবার মেডিকেল সেন্টার ঠিক করার আশ্বাস দেয়া হলেও বাস্তবে আর তা হয়ে উঠে নি।এবার অন্তত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হুশ হবে আশা করি।
[১২] জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যানের পরিচালক ড.আইনুল ইসলাম বলেন,আমরা মেডিকেলের বিষয়টা নিয়ে ভাবছি। অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য যেনো শিক্ষার্থীরা ভালো মানের সেবা পায় সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
[১৩] এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ ওহিদুজ্জামান বলেন, মেডিকেলের এ অবস্থার কারণ কি এ বিষয়ে আমার কাছে কোন জবাব নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলের ডাক্তারের অনিয়মিতের বিষয়ে তিনি বলেন, একজন রিজাইন নিবে দরখাস্ত দিয়েছে। কিন্তু আরেকজন কেনো নিয়মিত আসছে না আমি জানিনা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *